বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি গতকাল মধ্যরাতে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আজ বুধবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় হলে এর নাম হবে ‘দানা’। এর ফলে দেশের উপকূলে বৃষ্টি বাড়তে পারে। দেশের অন্য অঞ্চলেও বৃষ্টির আভাস রয়েছে।
আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম বলেন, ‘দুপুরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে উপকূল অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হতে পারে। তবে এটি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে।
জলবায়ু ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন, গভীর নিম্নচাপটি সংগঠিত হয়ে পুরোপুরি ঘুর্ণিঝড়ের গঠন আকৃতি ধারণ করেছে। ঘুর্ণিঝড় দানার কারণে যে ঘূর্ণায়মান মেঘের সৃষ্টি হচ্ছে তা এরই মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার জেলাগুলো পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
ঘুর্ণিঝড় দানার মেঘের কারণে আজ দিনের বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় হালকা থেকে মাঝারি মানের বৃষ্টির প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোর ওপরে বৃষ্টির আশঙ্কা করা যাচ্ছে সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে।
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কি.মি. যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৬০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
এটি মঙ্গলবার মধ্যরাতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭২৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৮০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল।
ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’। বৃহস্পতিবার সকালে ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গের কাছে পৌঁছাবে ঘূর্ণিঝড়টি। বুধবার থেকেই আবহাওয়ার পরিবর্তন হতে শুরু করবে। তবে ঝড়টি কোথায় আছড়ে পড়বে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়ে গেছে গভীর নিম্নচাপ, যা বুধবারের মধ্যে সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ডানা আছড়ে পড়তে পারে ওড়িশার পুরী এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপের মধ্যবর্তী অংশে। বুধ, বৃহস্পতি এবং শুক্রবার প্রবল ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে সংলগ্ন অঞ্চলগুলোতে। পুরী লন্ডভন্ড হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর এ কারণেই তড়িঘড়ি ‘ডেঞ্জার অ্যালার্ট’ জারি করেছে ওড়িশা প্রশাসন।
আগামী ২৪ এবং ২৫ অক্টোবর ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে প্রচুর বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া অফিস। বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে ওড়িশার পুরী, গঞ্জাম, জগৎসিংহপুর এবং ভদ্রক জেলায়।
গোপালপুর, পারাদ্বীপ এবং ধর্ম পোর্টে ‘ডেঞ্জার সিগনাল-১’ জারি করার নির্দেশ দিয়েছেন অতিরিক্ত রিলিফ কমিশনার পদ্মনাভ বেহারা। এক চিঠিতে তিনি বলেন, ‘এক্সট্রিমলি আর্জেন্ট। অবিলম্বে গোপালপুর, পারাদ্বীপ এবং ধর্ম পোর্টে সতর্কবার্তা জারি করতে হবে।’
এদিকে ওড়িশার স্পেশাল রিলিফ কমিশনার ডিকে সিং ১৪টি জেলার স্কুল এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুধবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছেন। গঞ্জাম, পুরী, জগৎসিংহপুর. কেন্দাপাড়া, ভদ্রক, বালেশ্বর, ময়ূরভঞ্জ, কেওনঝড়, ঢেঙ্কানল, জজপুর, আঙ্গুল, খোরধা, নয়াগড় এবং কটকে স্কুল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আইএমডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া গভীর নিম্নচাপ ক্রমেই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হচ্ছে। যা ক্রমশ পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হচ্ছে। শেষ পাওয়া আইএমডি আপডেট অনুযায়ী, পারাদ্বীপ থেকে এই ঘূর্ণিঝড় ৭০০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। সাগর দ্বীপ থেকে ৭৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে।
স্থানীয় আবহওয়াবিদরা বলছেন, এই ঘূর্ণাবর্ত পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ২৩ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। এরপর সেটি অগ্রসর হবে উত্তর-পশ্চিম দিকে। ২৪ অক্টোবর রাতে সেটি পরিণত হবে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে। ২৫ অক্টোবর সকালে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’-র গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ডানার প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুএক জায়গায় বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সে. বাড়তে পারে। মঙ্গলবার পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ কথা বলা হয়েছে।