ফের ধাক্কা!

পদ্মা সেতুর পিলারে আবারও ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার কাকলী নামের একটি ফেরি বাংলাবাজার ঘাট থেকে শিমুলিয়া ঘাটে আসার পথে পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারে ধাক্কা দিয়েছে। এবারের দুর্ঘটনা সম্পর্কে দুই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে- ১. প্রচণ্ড স্রোত, ভারি বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে ফেরিটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা; ২. কারিগরি সমস্যা। প্রকৃত কারণ যাই হোক, পদ্মা সেতু ঘিরে বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেখে ইতোমধ্যে জনমনে নানা প্রশ্ন ও সংশয় দেখা দিয়েছে, যার অবসান হওয়া জরুরি বলে মনে করি আমরা।

দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, এ নিয়ে গত দুই মাসে পদ্মা সেতুর পিলারে পাঁচবার ধাক্কার ঘটনা ঘটল। গত ২৩ জুলাই পদ্মা সেতুর ১৭ নম্বর পিলারে রো রো ফেরি শাহজালালের আঘাত হানার পর উচ্চপর্যায়ের যে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল, তারা এ বিষয়ে বিভিন্ন সুপারিশ রেখেছিলেন। কমিটির সুপারিশগুলো যথাযথভাবে পরিপালিত হলে দুর্ঘটনাটি নাও ঘটতে পারত। সাধারণত বিভিন্ন দুর্ঘটনার পর ত্বরিত পদক্ষেপ হিসাবে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠনের তোড়জোড় প্রত্যক্ষ করা যায়। তবে কমিটিগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন ও সুপারিশ কতটা আমলে নেওয়া হয়, সেটাই প্রশ্ন।

বস্তুত কোনো দুর্ঘটনা, বিশেষ করে নৌপথসংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনার পর তদন্তসাপেক্ষে জারি হওয়া বিধিবিধান ও সুপারিশগুলো অল্পদিনেই বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়ার কারণেই অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। দেশে ১৯৭৭ থেকে ২০১১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত অন্তত ৪০৪টি নৌদুর্ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, বর্তমানে বিআইডব্লিউটিসির বহরে থাকা ৫৩টি ফেরির অনেকগুলোর বয়সই ৪০ বছর পার হয়ে গেছে। আইন অনুযায়ী, ৪০ বছরের বেশি বয়সি নৌযানের ফিটনেস সনদ দেয় না বাংলাদেশ নৌপরিবহণ অধিদপ্তর। তাই যদি হয়, তাহলে নদীতে এসব ফেরি চলাচল করছে কিসের ভিত্তিতে? এক গবেষণা প্রতিবেদনে ত্রুটিপূর্ণ নৌযান, মাস্টার-চালক এবং ইঞ্জিন অপারেটরের অদক্ষতা, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব, বায়ু প্রবাহ ব্যবস্থা না থাকা, আবহাওয়া আইন অমান্য করা ইত্যাদিকে নৌদুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে সর্বশেষ সংঘটিত দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করে এমন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যাতে পদ্মা সেতুর পিলারে আর কোনো ফেরির ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা না ঘটে।

Full Video


ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এটা দেখেছেন কি? দেখে নিন