ভিডিওগুলো দেখে কালকে সারারাত ঘুমাতে পারিনি : ফারিয়া শাহরিন

চলমান চিত্রনায়িকা পরীমণি ইস্যুতে মুখ খুললেন অভিনেত্রী ও মডেল ফারিয়া শাহরিন। এক সময় পরীমণি ও ফারিয়া শাহরিনের মধ্যে তুমুল দ্বন্দ্ব ছিল। মালয়েশিয়ায় পড়াশোনাকালীন পরীমণির সঙ্গে অনলাইন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। সেসব পুরনো কথা। পরীমণির সর্বশেষ জন্মদিনে সেসব রাগ অভিমানের অবসান হয়েছে। জন্মদিনে উপস্থিত ছিলেন ফারিয়া শাহরিন।

পরে অবশ্য দুজনের মিটমাট হয়ে গিয়েছে আর দ্বন্দ্ব রেখে লাভ কি বলে মন্তব্য করেছিলেন গণমাধ্যমকর্মীদের নিকট। পরীমণির বিষয়ে এই অভিনেত্রী মুখ খুলেছেন। বলেছেন, বিয়ের পর জামাইও যদি বৌকে জোর করে বৌ এর সম্মতি ছাড়া শারীরিক সম্পর্ক করতে চায় সেটাও ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ হিসেবে গণনা হয়। যখন আইনের শিক্ষার্থী ছিলাম তখন জেনেছি। তাই কারো সম্মতি ছাড়া তার গায়ে একটা টোকা দেওয়াও অন্যায়।

ফারিয়া শাহরিন বলেন, ‘পরীমণি আগে যাই করছে সে তার মর্জি মতো করছে তার ইচ্ছে হয়েছে করছে, তার সম্মতি ছিল করছে কিন্তু তাই বলে তাকে চাহিবা মাত্র নষ্টামি করতে হবে এটা তো কোথাও লেখা ছিল না। আপনারা এরকম একটা বিষয় নিয়ে হাসতেছেন কেন? আমি ভিডিওগুলো দেখে কালকে সারারাত ঘুমাতে পারিনি এই ভেবে আমরা কতটা নিরাপদ। কি ফিউচার আমাদের এই দেশের?

ব্যাচেলর পয়েন্টের অন্তরা খ্যাত অভিনেত্রী বলেন, ‘আপনাদের বোনরাও তো প্রেম করে ঘুরে বেড়ায় কোনোদিন যদি আপনাদের বোনের সাথেও এমন হয়, হয়তো ওইদিন এসব কমেন্ট লিখতে আপনাদের বিবেকে বাধবে। জানি না এই মামলার ভবিষ্যত কী কিন্তু দোয়া করি এর বিচার হোক। আর একটা কথা সেক্সি ড্রেস পরলেই সে প্রোস্টিটিউট হয়ে যায় না। ডোন্ট জাজ ওযা বুক বাই ইটস কাভার।’

এর আগে সোমবার সকালে আশুলিয়ার একটি ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছেন বলে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমণি। রবিবার রাতেও সাংবাদিকদের কাছে এবং ফেসবুক পোস্টে তিনি একই অভিযোগ করেছিলেন। পরেরদিন সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন পরীমণি। এরপরেই ব্যবসায়ী নাসিরউদ্দিনসহ ৫ জন গ্রেপ্তার হন।

এসময় ব্যবসায়ী নাসিরউদ্দিনকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন। জবাবে সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে ব্যবসায়ী নাসিরউদ্দিন বলেন, যে ঘটনা বলা হচ্ছে এসব সবই মিথ্যা। আমি যখন বের হয়ে যাই তখন ওরা ঢোকে। ওরা যখন ঢোকে তখন আমাদের সিকিউরিটি অফিসাররা ছিল না। তারা মদ্যপ অবস্থায় ঢোকে। তাদের সঙ্গে একজন ছেলে ছিল। তারা যখন ঢোকে সবাই দুলতেছিল। তারা মদ্যপ ছিল।

তিনি বলেন, তারা ঢুকে আমাদের বারের কাউন্টার থেকে দামি ড্রিঙ্কস, অনেক বড় বড় দামি ড্রিঙ্ক জোর করে নেওয়ার চেষ্টা করে।

আপনার বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ- এমন প্রশ্নের জবাবে নাসির উদ্দিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ড্রিঙ্কস গুলো যে তারা নিতে চাইছে তারা তো নিতে পারেনি, তারা তো মেম্বার না। আমি জাস্ট তাদেরকে বাধা দিয়েছি যে এটা নেওয়া যাবে না। নিতে হলে কোনো অ্যাকান্টের এগেইনস্টে নিতে হবে। এটা বিক্রিযোগ্য না, এটা সাথে করে নেওয়ার জিনিস না।

নাসির উদ্দিন বলেন, এরপরেই সে উত্তেজিত হয়ে যায়। এরপর সে ভাঙচুর করে, গালিগালাজ করতে থাকে। এরপর আমাদের স্টাফরা তাকে থামানোর চেষ্টা করে। ওই সময় আমি থামানোড় চেষ্টা করি। তার সঙ্গে যে ছেলে ছিল সে ওই সময় এসে আমাকে চড় থাপ্পড় দেয়। গ্লাস মারে আমার ঘাড়ে লাগে। আমাদের সিকিউরিটির লোকরা এসে তাকে সরিয়ে নেয়। আমাদের সিকিউরিটিরা নিয়ে যায়, সেই সময় সে অনেক ড্রিঙ্কস করে ফেলে। আপনারা সিসি ক্যামেরায় দেখবেন সে গাড়িতে কিভাবে উঠতেছে।

এর আগে রবিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকাই ছবির আলোচিত নায়িকা পরীমণি। তিনি জানান, অমি নামে এক ব্যক্তি তার বেশ কবছরের পরিচিত। তার বাসার ডিজাইনার জিমির বন্ধু অমি। ওই সূত্রে পরীমণির বাসায় মাঝে মাঝে আসেন অমি। একদিন এসে বলেন যে একটা প্রজেক্টে টাকা ইনভেস্ট করবেন। তাই আমার সঙ্গে বসতে চান। ওই প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলতেই অমি উত্তরা ক্লাবে নিয়ে যান পরীমণিকে।

পরীমণি জানান, এ সময় সঙ্গে তার মেকআপম্যান এবং ডিজাইনারও ছিলেন। সেখানে খাওয়াদাওয়া করানো হয় পরীমণিসহ সবাইকে। এরপর একে একে লোকজন চলে যায়। তখন পরীমণিকে ড্রিংকস করতে বাধ্য করা হয়। মেকআপম্যানকে নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে পরীমণিকেও নির্যাতনের চেষ্টা চালান ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট নাসিরউদ্দিন। পরীমণি বাধা দিলে তাকে মারধর করা হয়। জোর করে তার মুখে মদ ঢেলে দেওয়া হয়। হঠাৎ পরীমণি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় তাকে লাথি মারেন নাসিরউদ্দিন।

তিনি আরো জানান, এ ঘটনার পর তারা রাতেই বনানী থানায় যান। সেখানে অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ তাদের টেস্টের জন্য হাসপাতালে যেতে বলে। পরে পরীমণি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথেই তিনি কিছুটা সুস্থবোধ করলে ফিরে বাসায় চলে আসেন। বাসায় ফেরার পর তিনি দুই দিন অসুস্থ ছিলেন। এরপর তিনি বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোথাও কোনো সাড়া পাননি। পরে রবিবার রাতে নিজের ফেসবুক পেইজে স্ট্যাটাস দেন।

রবিবার সন্ধ্যায় দেওয়া ফেসবুক পোস্টে পরীমণি তাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন। এর প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চান তিনি। ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।

প্রধানমন্ত্রী বরাবর এ স্ট্যাটাসে পরীমণি বলেন, এ বিচার কই চাইব আমি? কোথায় চাইব? কে করবে সঠিক বিচার? আমি খুঁজে পাইনি গত চার দিন ধরে। থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্রবন্ধু বেনজির আহমেদ আইজিপি স্যার; আমি কাউকে পাইনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে মা সম্বোধন করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, যাদের পেয়েছি, সবাইকে ঘটনার বিস্তারিত জেনে চুপ হয়ে যেতে দেখেছি। আমি মেয়ে, আমি নায়িকা, তার আগে আমি মানুষ। আমি চুপ করে থাকতে পারি না। আজ আমার সঙ্গে যা হয়েছে, তা যদি আমি কেবল মেয়ে বলে, লোকে কী বলবে, এসব মেনে নিয়ে চুপ হয়ে যাই, তাহলে আমি অনেকের মতো হব হয়তো।

নড়াইলের মেয়ে পরীমণির ঢাকার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে ২০১৫ সালে। এরপর এ পর্যন্ত প্রায় দুই ডজন চলচ্চিত্রে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।

Full Video


ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এটা দেখেছেন কি? দেখে নিন