ঢালিউডের আলোচিত নায়িকা পরীমনিকে হত্যা ও ধর্ষণচেষ্টা এবং পুলিশের মাদক মামলায় সম্প্রতি জামিন পেয়েছেন আবাসন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ। তিনি দুই মামলায় ১৮ দিন জেল খেটেছেন। এরমধ্যে দুই মামলায় ১২ দিন তিনি পুলিশের রিমান্ডে ছিলেন।
শনিবার মোবাইলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের নির্বাচিত জিএস ছিলাম। ঢাকার প্রথম বিভাগের ফুটবলার ছিলাম। উত্তরা ক্লাবের তিনবার সভাপতি ছিলাম। একজন ব্যবসায়ী। আমাকে আটক করার পরও কেউ আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি।
তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে নাসির বলেন, বড় রকমের ভিকটিম হলাম। কোনো দিন হাজত দেখিনি। রিমান্ডে ১২ দিনসহ ১৮ দিন জেল-হাজতে কাটিয়েছি। সত্যিকারে অন্যায় করলে আফসোস ছিল না। আশা করি তদন্তকারী সংস্থা সঠিক বিষয়টি তুলে আনবে। একজন সেলিব্রিটির অভিনয়ে আমি সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেলাম।
এর আগে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি মুক্তি পান। পুলিশের করা মাদকের মামলা থেকে নাসির ইউ মাহমুদ গত বুধবার জামিন পান। আগের দিন একই আদালত পরীমনির করা ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় তার জামিন মঞ্জুর করেন।
গত ১৪ জুন ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন ও তার বন্ধু অমির নাম উল্লেখ করে আরও চারজনকে অজ্ঞাত আসামি করে পরীমনি সাভার থানায় মামলা করেন। ওইদিন বিকাল তিনটার দিকে রাজধানীর উত্তরা থেকে নাসির ও অমি এবং তিনজন নারীসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় আসামিদের কাছ থেকে বিদেশি মদ ও ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। মাদক মামলায় গত ১৫ জুন নাসির ও অমির সাতদিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘গত ৮ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার বনানীর বাসা থেকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি (৩০), অমি (৪০) ও বনিসহ (২০) দু’টি গাড়িতে করে তারা উত্তরার উদ্দেশে রওনা হন। পথে অমি বলে বেড়িবাঁধের ঢাকা বোট ক্লাবে তার দুই মিনিটের কাজ আছে।’
‘অমির কথামতো তারা সবাই রাত আনুমানিক ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে গিয়ে গাড়ি দাঁড় করায়। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বলে। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়। অমি ক্লাবের ভেতরে গিয়ে বলে এখানকার পরিবেশ অনেক সুন্দর, তোমরা নামলে নামতে পার।’
এজাহারে পরীমনি আরও বলেন, ‘তখন আমার ছোট বোন বনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বোট ক্লাবে প্রবেশ করে ও বারের কাছের টয়লেট ব্যবহার করে। টয়লেট থেকে বের হতেই এক নম্বর বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদের ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ এক নম্বর আসামি মদপানের জন্য জোর করেন। আমি মদপান করতে না চাইলে এক নম্বর আসামি জোর করে আমার মুখে মদের বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এতে আমি সামনের দাঁতে ও ঠোঁটে আঘাত পাই।’
‘এক নম্বর আসামি (নাসির উদ্দিন মাহমুদ) আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করেন ও আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তিনি উত্তেজিত হয়ে টেবিলে থাকা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুড়ে মারেন। তখন কস্টিউম ডিজাইনার জিমি নাসির উদ্দিন মাহমুদকে বাধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করে জখম করেন।’
এর আগে গত ১৩ জুন রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাসে ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে বিচার চান পরীমনি। এরপর বিষয়টি নিয়ে রাতে সংবাদ সম্মেলন করেন।