দুই বছরে ব্যয় হবে ২৫ হাজার কোটি টাকা

টিকা কিনতে আগামী দুই অর্থবছরে (২০২১-২৩) ব্যয় করা হবে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৪ হাজার ২শ কোটি টাকা আগামী অর্থবছরেই ব্যয় হবে। সে লক্ষ্যে প্রস্তাবিত বাজেটে এ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আর বাকি অর্থ ব্যয় করা হবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে। তবে পুরো টাকা সংগ্রহ করা হচ্ছে বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদে অর্থায়ন পরিকল্পনায় তুলে ধরা হয়েছে এসব তথ্য। সেখানে বলা হয়, উল্লিখিত অর্থের বাইরে আরও ৪০ হাজার কোটি টাকা মিলবে বাজেট সহায়তা হিসাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থ সচিব (সিনিয়র) আবদুর রউফ তালুকদার বলেছেন, আগামী এক বছরে যে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা যাবে এর চেয়ে বেশি অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বাজেটে। সবমিলে ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা টিকা কেনা বাবদ রাখা হয়েছে। প্রয়োজন হলে অন্য খাত থেকে সরবরাহ করা যাবে।

সূত্র মতে, আগামী ২০২১-২৩ অর্থবছরে দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ৬২০ কোটি মার্কিন ডলার বা ৫৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৫০ কোটি ডলার বা ১২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে ভ্যাকসিন বা টিকা ক্রয়ে। বাকি ৪০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বাজেট সহায়তা হিসাবে ঘাটতি অর্থায়নে ব্যবহার করা হবে।এছাড়া বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ৫২ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ৪২০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে টিকা কিনতে। এর মধ্যে প্রায় দেড় কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করা হবে লজিস্টিক সাপোর্ট হিসাবে। বাকি ৫০ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকার পুরোটা যাবে টিকা ক্রয় খাতে। পাশাপাশি টিকা কিনতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক দেবে ৯৪ কোটি ডলার বা প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনায় বলা হয়, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী গণটিকা কর্মসূচি চালু করা হয়। গত ১৩ মে পর্যন্ত ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯০০ জন যোগ্য নাগরিককে টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হয় ৩৪ লাখ ৯৬ হাজার ১৮৬ জনকে। সেখানে আরও বলা হয়, সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত ভ্যাকসিনের মাধ্যমে দেশের সব যোগ্য নাগরিককে বিনামূল্যে করোনারভাইরাসজনিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এক্ষেত্রে টিকা ক্রয় ও টিকা প্রদানের সক্ষমতা অর্জনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন ক্রয় করেছে। ভারত সরকার ৩২ লাখ ডোজ এবং চীন ৫ লাখ ডোজ বাংলাদেশ সরকারকে মৈত্রী উপহার হিসাবে প্রদান করেছে। বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিক্স ফ্যাসিলিটি থেকে ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জন্য ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাবে। এছাড়া চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, বেলজিয়াম থেকে ভ্যাকসিন ক্রয়ের ব্যাপক চেষ্টা করছে।

সর্বশেষ তথ্য মতে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের টিকার ঘাটতি পূরণের জন্য বিভিন্ন দেশের কাছে টিকা চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ২০ লাখ ডোজ টিকা চেয়েছে বাংলাদেশ। আর চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেক থেকে করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে সরকার এ সপ্তাহে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে।সূত্র আরও জানায়, চীনের সিনোফার্ম থেকে দেড় কোটি টিকা কেনার চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছিল বাংলাদেশ। মে মাসের শেষ সপ্তাহে সরকারের এক অতিরিক্ত সচিব সাংবাদিকদের কাছে সিনোফার্মের টিকার দাম বলে দেন। এতে সিনোফার্ম থেকে জুন মাসে টিকার প্রথম চালান নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশের চেয়ে বেশি দামে কিনেছে শ্রীলংকা। বাংলাদেশ এ বিষয়টি অনিচ্ছাকৃত উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশও করেছে।

এদিকে রাশিয়ার কাছ থেকে ৬ কোটি ডোজ টিকা কেনার প্রস্তাব খুব শিগগিরই চূড়ান্ত হতে পারে। এ বিষয়ে চুক্তির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে মস্কোস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। এটি চূড়ান্ত হলে আগামী আগস্টের মধ্যে পাওয়া যাবে রাশিয়ার ৪০ লাখ ডোজ এবং ডিসেম্বরের মধ্যে পাওয়া যাবে ২ কোটি ডোজ টিকা। অবশিষ্ট ৩ কোটি ৬০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া যাবে ২০২২ সালের এপ্রিলের মধ্যে। তবে অগ্রিম টাকা দেওয়ার পরও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ফেব্রুয়ারির পর আর কোনো টিকা পাওয়া যায়নি। সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশের কেনা ৩ কোটি ডোজ টিকা জুনের মধ্যে সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু ভারত রপ্তানি বন্ধ রাখায় বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৭০ লাখ ডোজ হাতে পেয়েছে।

Full Video


ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এটা দেখেছেন কি? দেখে নিন