পৃথিবীতে যত ধরনের বোঝা হতে পারে, তন্মধ্যে ঋণের বোঝা সবচেয়ে ভারী। অতিমাত্রায় ঋণগ্রস্ত হওয়ার কারণে মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। কখনো কখনো এই অস্থিরতা হতাশায় রূপ নেয়। আর ঋণ পরিশোধে অপারগতায় সৃষ্ট এই তীব্র হতাশা অনেক ক্ষেত্রে মানুষকে আত্মহত্যার মতো জঘন্য কাজের দিকে ঠেলে দেয়।
সময়মতো পরিশোধ করা না গেলে, ঋণের বোঝা আরও ভারী হতে থাকে। ইসলামে সাধ্যের বাইরে ঋণ দেওয়া-নেওয়া দুটিই নিষেধ। তবে ঋণগ্রস্তের ঋণ মাফ করে দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য আখিরাতে অনেক বড় পুরস্কার রয়েছে বলে হাদিসে এসেছে।
সুদভিত্তিক ঋণব্যবস্থা ভুক্তভোগীর ঋণের বোঝা আরও বাড়িয়ে দেয়। সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় ঋণের সাথে চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ বাড়তে থাকে যা এক সময় তার জন্য পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে সে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ।
হাদিসে এসেছে, একবার আলী (রা.) এর কাছে এক ব্যক্তি তার ঋণ পরিশোধের জন্য কিছু সাহায্য চায়।
এ সময় আলী (রা.) তাকে বলেন, আমি কি তোমাকে কয়েকটি শব্দ শিক্ষা দেব, যা আমাকে রাসুলুল্লাহ (সা.) শিক্ষা দিয়েছেন? যদি তুমি এটা পাঠ করো, তাহলে আল্লাহই তোমার ঋণমুক্তির ব্যাপারে দায়িত্ব নেবেন, যদি তোমার ঋণ পর্বতসমানও হয়।
এরপর হযরত আলী রা. ওই ব্যক্তিকে নিচের দোয়াটি পড়তে বলেছিলেন-
اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكِ عَمَّنْ سِوَاكَ
বাংলা উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাকফিনী বিহালা-লিকা ‘আন হারা-মিকা ওয়া আগনিনী বিফাদ্বলিকা ‘আম্মান সিওয়া-ক।
বাংলা অর্থ: ‘হে আল্লাহ! হারামের পরিবর্তে তোমার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট কর। আর তোমাকে ছাড়া আমাকে কারো মুখাপেক্ষী করো না এবং স্বীয় অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে স্বচ্ছলতা দান কর।’ (তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং ৩৫৬৩)
হাদিসে বর্ণিত ঋণমুক্তির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া হলো-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
বাংলা উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-‘আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল।
বাংলা অর্থ: ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুঃশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২৮৯৩)
ঋণমুক্তির জন্য উপরোল্লেখিত দোয়া দুটি অত্যন্ত কার্যকর। সময়মতো ঋণ পরিশোধের সর্বাত্মক চেষ্টা করার পাশাপাশি দোয়াগুলো ভালো করে মুখস্থ করে নিয়ে নিয়মিত আমল করতে পারলে আল্লাহ চান তো ঋণমুক্ত হওয়া সম্ভব।
ইসলাম আসলে আমাদের জীবনের সকল সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছে, এবং এর উপযুক্ত সমাধানও দিয়েছে। আমাদের উচিত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশিত পন্থা অনুসরণ করা।