ইসলাম জাগ্রত ধর্ম, জাগ্রত মানুষের ধর্ম, ইসলামের জন্য জাগ্রত মানুষের প্রয়োজন। পৃথিবীর ইতিহাস থেকে সেসব ধর্ম হারিয়ে গেছে, যারা আধ্যাত্মিকতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিন্তা ও বুদ্ধি ও নেতৃত্বের ক্ষেত্রে জাগ্রত চেতন, সচেতন ও যোগ্য ব্যক্তিত্ব তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে। মানুষ প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর মানুষ দ্বারাই প্রভাবিত হয়। নিয়ম হলো প্রদীপ থেকে প্রদীপ প্রজ্বলিত হবে এবং তা হতেই হবে। উম্মাহর অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে জাগ্রত ব্যক্তিত্ব তৈরি করতে হবে—যার জ্ঞানবৃক্ষ, চিন্তাবৃক্ষ, কল্যাণকামিতা ও আধ্যাত্মিকতার বৃক্ষ নতুন নতুন লতাপাতার জন্ম দেবে, নতুন শাখা-প্রশাখা সৃষ্টি করবে। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘আমার উম্মত রহমতের বৃষ্টির মতো। কেউ বলতে পারে না তার প্রথম ফোঁটা মাটিকে বেশি সজীব করেছে, না শেষ ফোঁটা। আবার চলমান পৃথিবী ও বাস্তবতার সঙ্গে যার সম্পর্ক নেই সে গতিশীল ও সমকালীন মানুষের নেতৃত্ব দিতে পারে না।’
বিশুদ্ধ হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহ প্রতি শত বছরে এই উম্মতের জন্য একজন ব্যক্তি প্রেরণ করেন, যিনি তাদের দ্বিনি বিষয় সংস্কার করেন।’ অর্থাৎ আল্লাহ প্রতি শতাব্দীতে একজন সংস্কারক পাঠান, যিনি দ্বিনকে সজীব ও গতিশীল করেন এবং দ্বিনি সংস্কারের দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিনি সংস্কার কোনো সাময়িক বিষয় নয়, যা এক-দুই সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে, বরং তা একটি চলমান প্রক্রিয়া। ইসলামের ইতিহাসে এমন বহু মনীষী রয়েছেন, যাঁদের প্রভাব কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
রেললাইনে মানুষ একটি ছোট গাড়ি চালাত, সম্ভবত তা এখনো চলে—যার নাম ট্রলি। প্রথমে মানুষ তাতে ধাক্কা দেয়। এরপর তাতে বসে যায় এবং তা চলতে থাকে। গতি কমে গেলে নেমে আবার ধাক্কা দেয় এবং তাতে বসে পড়ে। এই উম্মতের গাড়িও অনুরূপ। আলেম ও মুজাদ্দিদরা হলেন ধাক্কা দানকারী। তাঁরা উম্মতকে সামনের দিকে ঠেলে নিয়ে যান। একবার ধাক্কা দিয়ে তাঁরা থেমে যান না। ট্রলি চলতে দুটি জিনিসের প্রয়োজন হয়—এক. গতিশীল চাকা, দুই. ধাক্কা দেওয়ার জন্য শক্তিশালী হাত। আবার যে ব্যক্তি তার ওপর বসা থাকে, তাকেও শক্ত হয়ে বসে থাকতে হয় যেন পড়ে না যায়। এই জাতি যখন গতি হারায় এবং পাপ কাজে লিপ্ত হয়, আল্লাহ তাদের জন্য একজন সংস্কারক প্রেরণ করেন, যিনি তাদের ধাক্কা দিয়ে গতি সৃষ্টি করেন।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান দায়িত্ব জাগ্রত চেতন মানুষ তৈরি করা। তারা এই কাজটিই করেছিল। এখন মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সময় সচেতন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব তৈরি করা, যাঁরা সমকালীন সংকটগুলো বুঝবেন এবং কোরআন-সুন্নাহর আলোকে তা সমাধান করতে পারবেন, যাঁরা সময়ের দাবি অনুযায়ী উম্মাহকে সঠিক পথ দেখাতে পারবেন।