ঢাকার বসুন্ধরা শপিং মল থেকে সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে গ্রেফতারের পর তার স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্না রবিবার (১৬ মার্চ) ফেসবুক লাইভে এসে যারা তাকে ধরিয়ে দিতে সহযোগিতা করেছে তাদের হুমকি দিয়েছেন। ফেসবুক লাইভে তিনি বলেছেন, ‘হ্যা, আমার জামাই গতকাল (শনিবার, ১৫ মার্চ) রাতে অ্যারেস্ট হয়েছে। এটা নিয়ে এত উল্লাস করার কিছুই নেই। ঠিক আছে। মামলা যখন আছে অ্যারেস্ট হবেই। এগুলো নিয়ে এত টেনশন করে দুঃখ প্রকাশ করে কান্নাকাটি করার কিছুই নেই। আপনারা যারা ভাবতেছেন, আমার জামাই অ্যারেস্ট হয়েছে, আর কোনও দিন বের হবে না- ওদের জন্য এক বালতি সমবেদনা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কাড়ি কাড়ি বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে নিয়ে আসবো। আমার জামাই বীরের বেশে চলে আসবে এবং যারা এ ঘটনা ঘটাইছে (গ্রেফতার করিয়েছে) তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না। মাথায় রেখো। এতদিন আমরা পলাতক ছিলাম। এখন তোমরা পালাতক থাকার বেলা। এখন আমার জামাই আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে আমার কাছে আসবে। তখন খেলা শুরু হবে। খেলা শুরু করছো তোমরা, শেষ করবো আমরা। ঠিক আছে- যারা আমার জামাই সাজ্জাদের সাপোর্টার আছো আমার জামাইয়ের জন্য দোয়া করবে- যাতে ১০-১২ দিনের মধ্যে জামিন করিয়ে ফেলতে পারি। ঠিক আছে। ধন্যবাদ।’
ছোট সাজ্জাদের গ্রেফতার ও অপরাধ প্রসঙ্গে সিএমপি কমিশনার
প্রবাসে অবস্থান করা বড় সাজ্জাদের প্রশ্রয়ে সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ চট্টগ্রামের বায়েজিদ, চান্দগাঁও এলাকায় চাঁদাবাজি, ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও নির্মাণাধীন ভবনে চাঁদাবাজিতে জড়িত ছিল। রবিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান নগর পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ।
সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘পুলিশ সদর দফতরের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার রাতে ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিং মল থেকে ছোট সাজ্জাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে সাজ্জাদ বসুন্ধরা শপিং মলে গিয়েছিল এমন খবর পেয়ে ঢাকায় অবস্থান করা সিএমপির সাদা পোশাকের একটি দল সেখানে যায়। এ সময় সাজ্জাদ পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টা করে। তখন পুলিশ আশপাশের লোকজনের সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করে।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলার শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ সম্পর্কে পুলিশের কাছে তথ্য ছিল, গ্রেফতার এড়াতে সাজ্জাদ এতদিন রাউজান, রাঙ্গুনিয়ার গহিন এলাকায় অবস্থান করতেন। যেখানে অভিযান করাটা ছিল দুরূহ। মাঝে দুয়েকবার শহরে এলেও অল্প সময়ের মধ্যেই চলে যেত। তার প্রতি নজরদারিতে রাখার কারণে গ্রেফতার সম্ভব হয়েছে।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘গত বছরের আগস্টে অক্সিজেন এলাকায় জোড়া খুন, পরে চান্দগাঁও এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্র দিয়ে চাঁদাবাজি, গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধ কার্যক্রম করতো সাজ্জাদ। তার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ ১৫টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
গ্রেফতার ছোট সাজ্জাদকে রবিবার আদালতে সোপর্দ করে চান্দগাঁও থানা এলাকায় তাহসিন হত্যা মামলায় ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত শুনানি শেষে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রবিবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর সিদ্দিকের আদালত এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) এএএম হুমায়ুন কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার আদুরপাড়া এলাকায় দোকানে বসে চা পান করার সময় তাহসিন নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তাহসিনের বাবার করা মামলায় ছোট সাজ্জাদকে প্রধান আসামি করা হয়।
উল্লেখ্য, শনিবার (১৫ মার্চ) ঢাকার বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্স থেকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি টিম তাকে গ্রেফতার করে।
