টাক মাথা নিয়ে অনেকেই বিড়ম্বনায় পড়েন। নানান কারণে চুল পরে গিয়ে অল্প বয়সে অনেকের টাক পড়ে গেছে মাথায়। এতে অনেকে লজ্জা পান। এতে কিন্তু লজ্জার কিছু নেই। চুল সৌন্দর্যের অন্যতম একটি অংশ হলেও টাক মাথাও কিন্তু অন্যরকম এক ব্যক্তিত্ব এনে দেয় পুরুষের। আজকের দিনটি সেই সব মানুষদের জন্যই। যারা টাক হয়ে গেছেন এরই মধ্যে।
১৪ অক্টোবর বিশ্বে পালিত হয় বি বোল্ড অ্যান্ড বি ফ্রি ডে অর্থাৎ টাক হোন, মুক্ত থাকুন দিবস। যেটি শুরু করেছিলেন ওয়েলক্যাট হার্বসের প্রতিষ্ঠাতা, টমাস রায় এবং রুথ রায়। যদিও দিবসটি প্রথম কবে উদযাপিত হয়েছিল তা জানা যায়নি। তবে তাদের দাবি, বি বোল্ড অ্যান্ড বি ফ্রি ডে অনেক পুরুষ ও নারীকে তাদের মাথা ন্যাড়া করতে এবং তাদের চেহারা নিয়ে গর্বিত হতে উৎসাহিত করেছে।
বর্তমান সমাজে সৌন্দর্যের মানদণ্ড ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে। বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে, টাক মাথার প্রবণতা এখন একটি নতুন ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। যেখানে একসময় টাক মাথাকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হতো, সেখানে এখন এটি ব্যক্তিত্বের একটি নতুন ধরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। টাক মাথা পুরুষদের আত্মবিশ্বাস, স্টাইল এবং সামাজিক সম্পর্কগুলোর উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে।
টাক মাথা পুরুষের ব্যক্তিত্বে বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে পারে। যেমন- টাক মাথার প্রথম এবং প্রধান প্রভাব হলো আত্মবিশ্বাস। অনেক পুরুষ যারা টাক মাথার মুখোমুখি হচ্ছেন, তারা শুরুতে হতাশ হতে পারেন। তবে, যখন তারা এই পরিবর্তনকে গ্রহণ করেন, তখন তারা নিজেকে আরও শক্তিশালী এবং আত্মবিশ্বাসী মনে করতে শুরু করেন। টাক মাথা যেহেতু একটি অনন্য চেহারা তৈরি করে, তাই এটি অনেকের জন্য নিজেদের ভালোভাবে প্রকাশ করার একটি উপায় হয়ে দাঁড়ায়। যখন একজন পুরুষ তার চেহারা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হন, তখন তিনি সামাজিকভাবে আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেন।
টাক মাথা পুরুষদের স্টাইলের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। আজকাল, টাক মাথার পুরুষরা বিভিন্ন ধরনের পোশাক ও এক্সেসরিজ দিয়ে নিজেদের স্টাইলিস্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছেন। টাক মাথার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের গ্ল্যামারাস সানগ্লাস, হ্যাট বা স্কার্ফ ব্যবহার করে তারা নিজেদের ব্যক্তিত্বকে আরও উজ্জ্বল করতে পারেন। এই পরিবর্তনের ফলে, টাক মাথা পুরুষদের মধ্যে একটি নতুন ফ্যাশন ট্রেন্ড সৃষ্টি হয়েছে, যা তাদের মডার্ন এবং ট্রেন্ডি ইমেজ তৈরি করতে সাহায্য করে।
টাক মাথার পুরুষরা অনেক সময় অন্যদের কাছে আরও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। একটি শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে, তারা সহজেই সামাজিক পরিবেশে প্রবেশ করতে সক্ষম হন। টাক মাথা আসলে একটি সামাজিক স্ট্যাটাস হিসেবে কাজ করে, যেখানে অনেকে তাদের আলাদা ভাবনা এবং মনোভাবের জন্য তাদের প্রশংসা করতে শুরু করে।
আরো পড়ুন:
৭ ধরণের পুরুষকে কোন কিছুতেই না বলতে পারেন না মেয়েরা!
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, টাক মাথার পুরুষদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক। অনেক ক্ষেত্রেই তারা শক্তিশালী, আত্মবিশ্বাসী এবং লিডারশিপ গুণাবলির অধিকারী হিসেবে বিবেচিত হন। মিডিয়া এবং সিনেমায় টাক মাথা পুরুষদের যেমন নেতিবাচক চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হত, এখন তারা অনেক ক্ষেত্রেই হিরো বা আইকনিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখা হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষও তাদের প্রতি আরও ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে শুরু করেছে।
তবে শুধু একবিংশ শতাব্দীতেই নয়, ১৯৫০ এর দশকের শেষের দিকে, কামানো মাথা একটি ফ্যাশন হয়ে উঠেছিল। টাক পুরুষদের আরও সাহসী, আত্মবিশ্বাসী, কঠোর এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ হিসেবে দেখা হত। অনেক অভিনেতা, রাজনীতিবিদ, সংগীতজ্ঞ এবং ক্রীড়া তারকারা টাক মাথাকেই ফ্যাশন হিসেবে নিয়েছেন। টাক মাথার পুরুষরাই বেশি আকর্ষণীয় ছিলেন।
১৯৯০ এর দশকে, মাইকেল জর্ডান, ইভান্ডার হলিফিল্ড এবং ব্রুস উইলিসের মতো লোকেদের প্রবণতাটিকে আরও জনপ্রিয় করার সঙ্গে শেভড হেড স্টাইলটি শীর্ষে ছিল। বর্তমানে অনেক বিখ্যাত মানুষরা টাক মাথার। এই টাক মাথার ইতিহাস কিন্তু বহু পুরোনো। প্রস্তর যুগের আদি পুরুষেরা চুল শেভ করতে ধারালো ক্লামশেল এবং চিমটি ব্যবহার করতেন। প্রাচীন রোম এবং মিশরে, অত্যন্ত গরম জলবায়ুর কারণে পুরোহিতদের এবং সাধারণ লোকদের মধ্যে মাথা কামানো সাধারণ ছিল। মিশরীয়রা সোনা এবং তামা দিয়ে তৈরি শেভিং সরঞ্জাম তৈরি করেছিল বলে জানা যায়।