৬৩ শতাংশ স্কুলগামী কিশোর-কিশোরী প’র্নোগ্রাফিতে আসক্ত!!


দেশের কিশোর–কিশোরীদের প্রায় ৬৩ শতাংশ পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। অর্থাৎ, প্রতি ১০ জন কিশোর–কিশোরীদের মধ্যে ৬ জনেরও বেশি পর্নোগ্রাফিতে সময় পার করেন। সম্প্রতি একটি গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে। বলা হচ্ছে, মূলত করোনাভাইরাস মহামারি ও এর কারণে দেওয়া লকডাউনের প্রভাবেই এমনটা হয়েছে।

২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথমবার করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর লকডাউন শুরু হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-কারখানা সবই বন্ধ ঘোষণা করা হয়। লকডাউনের সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অনলাইনে ক্লাস হত বলে তখন সকলেই নিজ বাড়িতে একটা লম্বা সময় পার করে। তবে এই সময়টার পরপরই দেশের স্কুলগামী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ইন্টারনেটে আসক্তি, বিষণ্নতা এবং পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তি বেড়ে যায়। এই সামাজিক সমস্যা কিশোর-কিশোরীদের সার্বিক বিকাশের ওপর কতটা বা কেমন প্রভাব ফেলেছে তা নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়।

উইলি পাবলিশারের ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল হেলথ সায়েন্স রিপোর্টে গবেষণায় ফলাফল প্রকাশিত হয়। চলতি বছরের জুলাই সংখ্যায় চীনের নানজিং ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ দ্য এনভায়র্নমেন্টের পিএইচডি শিক্ষার্থী মো. আবু বকর সিদ্দিকের তত্ত্বাবধানে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। ‘পোস্ট কোভিড-১৯ ইন্টারনেট অ্যাডিকশন, ডিপ্রেশন অ্যান্ড পর্নোগ্রাফি অ্যাডিকশন অ্যামং অ্যাডোলসেন্টস: ফাইন্ডিং ফ্রম এ ন্যাশনওয়াইড স্টাডি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণাটির বিশ্লেষণে দেখা যায়, কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের প্রায় ৬২.৯ শতাংশ কিশোর-কিশোরী পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত।

৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে স’হ’বা’স করতে ন্যাচারেলি যা যা করনীয়।

 

এ গবেষণায় অবদান রেখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. খালিদ সাইফুল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আখের আলী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইরিন পারভিন, ইউনিভার্সিটি সায়েন্স মালয়েশিয়ার আল মাহমুদ, আমেরিকার টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটির মেহেদী হাসান, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রামের যোবায়ের আহমেদ, মালয়েশিয়ার আলবুখারী ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শেখ মুযযাম্মিল হোসেন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোনিয়া মঞ্জুর এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিনের (নিপসম) মোহাম্মদ মেসবাহউর রহমান।

মোট ৮ হাজার ৮৩২ জন কিশোর-কিশোরীর অনলাইন অংশগ্রহণে গবেষণাটি করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে নানা বিধিনিষেধের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক স্থিতিশীলতা কমে যায়। তখন কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ভয় ও এর ফলে এক ধরনের চাপের সৃষ্টি হয়। যেটা পরবর্তীতে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD), ইন্টারনেট আসক্তি (IA), পর্নোগ্রাফি আসক্তি (PA), বিষণ্নতা, মানসিক চাপ, উদ্বেগ, এমনকি আত্মহত্যায় রূপ নেয়।

র‍্যানডম নমুনা পদ্ধতিতে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬৪.৩ শতাংশ কিশোরী এবং ৩৫.৭ শতাংশ কিশোর ছিল। যাদের সকলের বয়স ১৩ থেকে ১৯ বছর। এদের মধ্যে ৯৮ শতাংশ কিশোর-কিশোরী ছিল অবিবাহিত, আর দুই শতাংশ বিবাহিত।

মায়ের পোশাকে ১৬ বছর পর রুনার ১৪ বছরের মেয়ে!

গবেষণায় পাওয়া ফলাফলে দেখা গেছে, ইন্টারনেটে আসক্তি ছিল ৬৩ শতাংশ কিশোর–কিশোরীর। অন্যদিকে ৭৬.৬ শতাংশ ভুগেছে বিষণ্নতায়। সামগ্রিকভাবে ৬২.৯ শতাংশ কিশোর-কিশোরী পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত ছিল। তবে যেসব শিক্ষার্থীরা ওই সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া বেশি ব্যবহার করেছে, কিন্তু একদমই শরীরচর্চা করেনি, তাদের মধ্যে বিষণ্নতায় ভোগা এবং পর্নোগ্রাফিতে আসক্তির প্রবণতা বেশি দেখা যায়।

এ গবেষণা নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যাটিস্টিকস ও ডেটা অ্যানালিসিস বিভাগের প্রভাষক আখের আলী ইনডিপেনডেন্ট ডিজিটালকে বলেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে ছেলেদের মধ্যে মেয়েদের তুলনায় ইন্টারনেটে আসক্তি বেশি লক্ষ্য করা যায়। তবে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা মানসিক বিষণ্নতায় বেশি ভোগে। কিন্তু এদের মধ্যে যে সকল শিক্ষার্থীরা বাড়িতে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করেছে তারা অপেক্ষাকৃত কম অবসাদগ্রস্ত ছিল। এ ছাড়া পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হওয়ার প্রবণতা ছেলেদের মধ্যে বেশি পাওয়া গেছে।

আখের আলী আরও বলেন, ‘কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বেশি ইন্টারনেটে আসক্তির কারণে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় ইন্টারনেটে বেশি আসক্ত হওয়ায় তাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা সমস্যা হয়। যেমন ঘুমের সমস্যা, একাকীত্ব ও সামাজিক দক্ষতা অর্থাৎ মানুষের সঙ্গে কথা বলা বা মেশার ইচ্ছা অনেকটা কমে যায়। আর বিষণ্নতার কারণে মেয়েরা জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। যার ফলাফল অনেক সময় আত্মহত্যা পর্যন্ত গড়ায়। পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত কিশোরদের যৌন আচরণে নানা নেতিবাচকতা দেখা যায়। এতে তাদের সম্পর্কের প্রতি সম্মান এবং সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি থাকে না। ফলে তাদের মধ্যে মানসিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় বেড়ে যায়।’

প্রভাষক আখের আলীর মতে, এ সমস্যাগুলোর দিকে আলোকপাতের জন্যই এ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কিশোর-কিশোরীদের সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে এ সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পরিবার ও শিক্ষকেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। এ ছাড়া কিশোর-কিশোরীদের পাঠ্যবইয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুফলের পাশাপাশি এর নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরে যে কোনো অধ্যায় সংযোজন করা যেতে পারে।

Full Video


ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এটা দেখেছেন কি? দেখে নিন