ফেসবুকে প্রেম ও অভিভাবকের অমতে বিয়ে করে যৌতুকের চাপে সংসারে বনিবনা না হওয়ায় অবশেষে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ৭ পৃষ্ঠার চিঠি লিখে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন জান্নাতুল ফেরদৌসী সুমাইয়া (১৯) নামের এক গৃহবধূ।
চিঠিতে বাবা-মায়ের উদ্দেশে সুমাইয়া লিখেন- ‘তোমরা মনে কষ্ট নিও না। শিপনকে সুখে রাখার জন্য আমি চলে যাচ্ছি। আমার মুখ তাকে দেখতে দিও না। আমার শরীরটা কাটতে দিও না। আমি তাহলে কষ্ট পাব।’
শনিবার রাত ১০টার দিকে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের বিশগিরিপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। রোববার সকালে গৃহবধূ সুমাইয়ার মরদেহ ও চিঠি উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
এদিকে, রোববার রাতে ওই গৃহবধূর বাবা বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এতে জান্নাতুলের স্বামী শিপন মিয়া, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদকে আসামি করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত ৮ মাস আগে শেরপুর সদর উপজেলার সাপমারী এলাকার শিপন নামের এক যুবকের সঙ্গে ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্কে বিয়ে হয় নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের আবুবকর সিদ্দিকের কন্যা জান্নাতুল ফেরদৌসী সুমাইয়ার। অভিভাবকের অসম্মতিতে বিয়ে হওয়ায় মেনে নিচ্ছিল না স্বামী শিপনের পরিবার। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রী ও পরিবারের লোকজনদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকত। এমনকি শিপন বিয়ের পর যৌতুকের ৮ লাখ টাকার জন্য সুমাইয়াকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করত। এসব বিষয় নিয়ে রাগারাগি করে গত রোজার ঈদের সময় সুমাইয়া তার বাবার বাড়িতে চলে এসে সেখানেই থাকছিলেন।
শনিবার রাতে সুমাইয়া মনের ক্ষোভে ৭ পৃষ্ঠার চিঠি লিখে শয়নকক্ষে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সুমাইয়া চিরকুটে লিখেন- ‘শুনেছি ভুল করলে শাস্তি পেতে হয়, তাই আমার ভুলের জন্য নিজেই নিজেকে শাস্তি দিলাম। বিয়ের গোসলটাও পেলাম না। শেষ গোসলটাও পাব না। জানাজাও পাব না। আমার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। অনেক ভালোবাসি তোমাকে শিপন; কিন্তু তুমি শেষ পর্যন্ত তোমার সঙ্গে থাকতে দিলা না।’
তিনি আরও লিখেন- ‘আমি চাইলে দ্বিতীয় বিয়ে করে জীবনটা ভালোভাবে চালাতে পারতাম; কিন্তু আমি চাই না দ্বিতীয় কেউ আমার শরীরটা উপভোগ করুক।’
বাবা-মাকে উদ্দেশ্য করে সুমাইয়া লিখেন- ‘তোমরা মনে কষ্ট নিও না। শিপনকে সুখে রাখার জন্য আমি চলে যাচ্ছি। আমার মুখ তাকে দেখতে দিও না। আমার শরীরটা কাটতে দিও না। আমি তাহলে কষ্ট পাব।’
জান্নাতুলের পরিবারের অভিযোগ, জান্নাতুলকে দিয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন শিপন। এছাড়া চাকরি নেয়ার কথা বলে আট লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। জান্নাতুল চার মাস আগে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি চলে আসেন। যৌতুক দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে জান্নাতুল স্বামীর বাড়িতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
জান্নাতুলের মা মাহমুদা বেগম অভিযোগ করেন, আমাদের মেয়ের সঙ্গে শিপন প্রতারণা করে বিয়ে করেছে। আমাদের মেয়েকে দিয়ে ঋণ করিয়েছেন। মেয়ে একার সিদ্ধান্তে বিয়ে করার সবকিছু মুখ বুঝে সহ্য করেছে। আমার মেয়ে ঋণের ও যৌতুকের চাপে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। আমি এর সঠিক তদন্তের মাধ্যমে শিপনসহ অভিযুক্তদের বিচার চাই।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী থানার ওসি মনিরুল আলম ভুঁইয়া বলেন, সুমাইয়ার মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ রোববার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরে সুমাইয়ার বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামি করে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেছেন। আসামিরা হলেন, নিহতের স্বামী শিপন মিয়া, শ্বশুর, শাশুড়ি এবং ননদ। পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে। তবে এখনও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।