টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪-এর সুপার এইট পর্বের ম্যাচে বাংলাদেশকে খুব সহজেই হারিয়ে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে বৃষ্টিবিঘ্নিত এই ম্যাচে বাংলাদেশ ডিএলএস (বৃষ্টি আইনে) পদ্ধতিতে ২৮ রানে হেরে গিয়েছে।
এই ম্যাচের শুরু থেকেই বাংলাদেশের দুর্বলতা একে একে বের হতে থাকে। গ্রুপ পর্ব থেকে তুলনামূলক ভালো ব্যাটিং উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটাররা একেবারেই স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাট করতে পারেননি।
টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডার এই উইকেটে খুবই ধীরগতির ব্যাট করেছে।
পুরো ২০ ওভার ব্যাট করে বাংলাদেশ তোলে ১৪০ রান, জবাবে বৃষ্টিতে খেলা একেবারেই বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ১১ ওভার ২ বলে ১০০ রান তোলে দুই উইকেট হারিয়ে। এসময় বৃষ্টি আইনে অস্ট্রেলিয়া ২৮ রানে এগিয়ে ছিল।
“সুপার এইট পর্বে এসে বাংলাদেশ দলের আসল রূপ দেখা যাচ্ছে, দলটার কোনও হার্ড হিটার নেই, কোনও ডেথ বোলার নেই”।
এমনটাই হয়েছে আসলে, যে উইকেটে ট্রাভিস হেড ও ডেভিড ওয়ার্নার ওভার প্রতি প্রায় ১০ করে রান নিয়েছে পাওয়ারপ্লেতে সেখানে লিটন দাশ পাওয়ারপ্লেতেই এক ওভারে কোনও রান নিতে পারেননি।
তিন ওভারে বাংলাদেশের রান ছিল ৮, এক উইকেট হারিয়ে, এই সময় লিটন দাশ যেন রান নিতেই পারছিলেন না।
২৫ বলে ১৬ রানের ইনিংসের একটা পর্যায়ে লিটন দাশের রান ছিল ১২ বলে ২।
যেখানে পাওয়ারপ্লেতেই রান তোলার জন্য চেষ্টা করেন ব্যাটাররা, লিটন দাশের খেলা ২৫ বলে সেই সময়েই রান তোলা সবচেয়ে কঠিন মনে হচ্ছিল।
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর সাথে লিটন দাশ ৫১ বলে ৫৮ রানের জুটিতে টিকে ছিলেন কিন্তু কখনোই মনে হয়নি তিনি ঠিকঠাক ব্যাট করতে পারছেন।
এই সময়েই বাংলাদেশ ম্যাচে অনেকটা পিছিয়ে পড়ে, এখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দলটি।
বাংলাদেশের প্রায় সব ব্যাটারই উইকেটে সেট হতে এবং রান তুলতে বেশ সময় নিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
যেমন শান্ত আপাত দৃষ্টিতে সেরা ইনিংস খেললেও তিনি ২২ বলে ৩১ থেকে ৩৬ বলে ৪১ রানে আউট হয়েছেন।
অর্থাৎ শেষ ১০ রান তুলতে তিনি বল নিয়েছেন ১৪টি।
শান্ত ও লিটন দুজনই লেগস্পিনার অ্যাডাম জাম্পার বলে সুইপ শট খেলতে গিয়ে উইকেট দিয়ে এসেছেন।
তাওহীদ হৃদয় ১৪২ স্ট্রাইক রেটে ২৮ বলে ৪০ রানের একটি ইনিংস খেলেছেন। তিনি এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটার হিসেবে খেলছেন কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এটা যথেষ্ট নয় সেটা বোঝাই যাচ্ছে।
মাঝের সময়টাতে বাংলাদেশ খুবই ধীরে খেলেছে, যেমন নবম ওভার থেকে ১৬তম ওভার পর্যন্ত ৮ ওভারে ৪৮ বলে মাত্র ৪৬ রান তুলেছে বাংলাদেশ।
একই সাথে নিয়মিত বিরতিতে উইকেটও হারিয়েছে বাংলাদেশ।
যখন মনে হচ্ছিল হৃদয়ের আক্রমণাত্মক ব্যাট করা দরকার সেই শেষ ৩ ওভারে তিনি মাত্র ৫ বল খেলে ৫ রান তুলেছেন।
বোলার হিসেবে খেলা তাসকিন আহমেদ ও তানজিম সাকিব মিলে ১০ বলে ১৭ রান তুললে কোনও মতে ১৪০ করেছে বাংলাদেশ।
উইজডেনের ডিজিটাল এডিটর অভিষেক মুখার্জি নিজের ফেসবুক একাউন্টে লিখেছেন, “আন্তর্জাতিক কিংবা ঘরোয়া ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটারদের টি-টোয়েন্টি স্ট্রাইক রেট চেক করলেই বোঝা যায় কেন নিজেদের অনুকূল পরিবেশ ছাড়া বাংলাদেশের ম্যাচ জয় এতোটা কম”।
প্যাট কামিন্সের হ্যাটট্রিক
চতুর্থ অস্ট্রেলিয়ান বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে হ্যাটট্রিক করেছেন অজি ওয়ানডে ও টেস্ট অধিনায়ক প্যাট কামিন্স।
এর আগে ব্রেট লি ২০০৭ সালে, অ্যাস্টন অ্যাগার ২০২০ সালে, নাথান ইলিশ ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি হ্যাটট্রিক করেছিলেন।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের চারটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি হ্যাটট্রিকের ৩টিই বাংলাদেশের বিপক্ষে।
কেবল অ্যাগার ২০২০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই কীর্তি গড়েছিলেন।
প্যাট কামিন্স এই হ্যাটট্রিকে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে নিয়েছেন, ১৮তম ওভারের শেষ দুই বলে টানা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মাহেদি হাসানকে আউট করেন কামিন্স।
২০তম ওভারের প্রথম বলে তাওহীদ হৃদয়কে আউট করেন তিনি, হ্যাজলউড ক্যাচ নিয়েছেন।
সতীর্থরা দৌড়ে এলেও কামিন্সকে তেমন উদযাপন করতে দেখা যায়নি হ্যাটট্রিকের পরেও, খুব সাদামাটা এক হাসির পর তিনি বোলিং মার্কে ফিরে যান।
সাকিব আল হাসান কে চেনা যাচ্ছে না
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের সেরা বোলার ও ব্যাটার দুটোই সাকিব আল হাসান, এর আগের দশ ম্যাচেই তিনি অবদান রেখেছেন, কিন্তু অ্যান্টিগায় সুপার এইট পর্বের ম্যাচে সাকিব আল হাসানকে পাওয়াই যায়নি।
দশ বলের একটি ইনিংস খেলেছেন তিনি এই দশ বলে অন্তত ৩ বার ক্যাচ তুলেছেন, শেষে মার্কাস স্টইনিসের বলে আউট হয়েছেন।
এই স্টইনিস সম্প্রতি সাকিব আল হাসানকে সরিয়ে টি-টোয়েন্টি র্যাংকিং -এর এক নম্বর অলরাউন্ডারের পদে বসেছেন।
সাকিব ১০ বলে ৮ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন, বোলিং ইনিংসে বলই হাতে নেননি।
এই কিছুদিন আগেও বল-ব্যাটে পারফর্ম করা সাকিবকে এখন দলের জন্য বোঝা বলছেন সমর্থকদের অনেকেই, অনেকে প্রশ্ন তুলছেন দলে আসলে সাকিবের কাজ কী?
চলমান বিশ্বকাপে সাকিব নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ পাওয়ার পরেও ব্যাটিং নিয়ে অস্বস্তি বোঝা যাচ্ছিল, রান করলেও সাকিব ঠিক স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে ব্যাট করতে পারেননি।
একমাত্র নেপালের বিপক্ষে ২টি উইকেট নিয়েছেন সাকিব বল হাতে তাকে দেখাই যাচ্ছে না।
রিশাদ বাদে বোলিং ছিল নখদন্তহীন
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে প্রতীকী অর্থে টাইগার বা বাঘের দল বলে থাকেন সমর্থকরা। ক্রিকেট বোর্ডের লোগোতেও জাতীয় পশু রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের একটা ছবি রয়েছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বিশ্ব ক্রিকেটেও টাইগার্স নামেই সুপরিচিত। তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই টাইগাররা ছিল নখদন্তহীন।
ম্যাচ শেষে নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, “আমাদের উচিৎ ছিল অন্তত ১৭০ রান করা।”
তবে শান্তর কথা অনুযায়ী যদি বাংলাদেশ ১৭০ রান করতোও তাহলেও অস্ট্রেলিয়ার জয়ের পাল্লা ভারি থাকতো, কারণ বৃষ্টিতে ম্যাচ বন্ধ হওয়ার আগেই অস্ট্রেলিয়া ২ উইকেট হারিয়ে ১১.২ বলে ১০০ রান তুলে নিয়েছিল।
স্পিনাররা কিছুটা প্রতিরোধ গড়েছেন, যেমন লেগস্পিনার রিশাদ ২ উইকেট তুলে নিয়েছেন, এই বিশ্বকাপে রিশাদ মোট উইকেট নিয়েছেন ৯টি।
তবে ফাস্ট বোলাররা ছিলেন একেবারেই অকার্যকর, আগের ম্যাচের নায়ক তানজিম সাকিব একটি উইকেটের সুযোগ পেয়েছিলেন তবে নিচে নামতে থাকা বলটি হাতে ধরে রাখতে পারেননি তাওহীদ হৃদয়।
তাসকিন আহমেদ ৮ বল করে ২২ রান দিয়েছেন।
বাংলাদেশের বোলিং খুব সাধারণ মনে হচ্ছিল ট্রাভিস হেড ও ওয়ার্নারের সামনে, ওয়ার্নার তুলেছেন ৩৫ বলে ৫৩ রান, ট্রাভিস হেড ২১ বলে ৩১।
শনিবার রাতে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।