তীব্র দাবদাহের কারণে ভারতে এবার গমের উৎপাদন কম হয়েছে। যে কারণে স্থানীয় বাজারেও গমের দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতিতে গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। আজ শনিবার থেকে তাৎক্ষণিক এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে বলে খবর প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।শুক্রবার রাতে ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) এক বিবৃতিতে বলেছে, গমের রপ্তানি অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে বিজ্ঞপ্তির তারিখে বা তার আগে একটি অপরিবর্তনীয় ক্রেডিট চিঠি জারি করা হয়ে থাকলে তাদের রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হবে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, পেঁয়াজ বীজের রপ্তানির বিষয়টিও সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।ভারতের এই সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্ববাজারে গমের দাম বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম কমানোর লক্ষ্যে শনিবার থেকেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে ভারতের সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
তবে এ ক্ষেত্রে কিছু নমনীয়তা দেখানো হবে। ভারতীয় সরকার জানিয়েছে, ইতিমধ্যে রপ্তানির জন্য ইস্যু হওয়া লেটার অব ক্রেডিটের (এলসি) বিপরীতে রপ্তানির সুযোগ থাকছে। এ ছাড়া ‘নিজেদের খাদ্য নিরাপত্তার চাহিদা পূরণের’ চেষ্টা করছে, এমন প্রতিবেশী দেশগুলোর অনুরোধ বিবেচনায় থাকবে।ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর কৃষ্ণসাগর অঞ্চল থেকে গম রপ্তানিতে ধস নামে। ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গম উৎপাদনকারী ভারতের ওপর রপ্তানি চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকে।
চলতি বছর এক কোটি মেট্রিক টন গম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল দেশটি। কিন্তু নতুন এই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তে সে লক্ষ্যমাত্রায় আর পৌঁছানো যাচ্ছে না।ভারত গত এপ্রিলে রেকর্ড ১৪ লাখ টন গম রপ্তানি করেছে এবং মে মাসে আরও ১৫ কোটি টন রপ্তানির জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে।
দেশটির নতুন সিদ্ধান্তে হতাশ গম রপ্তানিতে জড়িত মুম্বাইয়ের একজন ডিলার। তিনি বলেন, ‘রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা খুবই হতাশার। আমরা আশা করছিলাম, দুই থেকে তিন মাস পর রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আসবে। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতির অঙ্ক বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকারের মনোভাবে পরিবর্তন আসে।’আরেক ডিলার বলেন, ভারতের গম রপ্তানির এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব বিশ্বজুড়ে পড়বে। কারণ এই মুহূর্তে বাজারে আর বড় সরবরাহকারী নেই।
উল্লেখ্য, ভারতে এ মুহূর্তে গমের দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। দেশটিতে এখন প্রতি টন গমের দাম ২৫ হাজার রুপি (প্রায় ৩২২ ডলার)। বিপরীতে সরকার ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ২০ হাজার ১৫০ রুপি ঠিক করে দিয়েছিল।
প্রসঙ্গত, বিশ্বে গম রপ্তানিতে ভারতের অবস্থান দ্বিতীয়। শীর্ষ দেশগুলোর দুটি ইউক্রেন ও রাশিয়া। তারা এখন যুদ্ধে লিপ্ত। বিশ্ববাজারে এক-তৃতীয়াংশ গমের জোগান দেয় ইউক্রেন ও রাশিয়া। তাই এ মুহূর্তে গমের জোগান ভারত থেকেই বেশি আসার কথা ছিল।