সয়াবিন তেল নিয়ে অস্থিরতার মধ্যেই নীরবে দাম বেড়ে গেল বোতলজাত শর্ষের তেলেরও। ঈদকে কেন্দ্র করে বাজারে সয়াবিনের সংকট দেখা দেওয়ায় ভোক্তাদের অনেকে বিকল্প ভোজ্যতেল হিসেবে শর্ষের তেল কিনতে শুরু করেন। তাতে বাজারে এ তেলের চাহিদা বেড়ে যায়। আর তাতেই দামও বেড়েছে প্রতি লিটার ৮০ টাকা পর্যন্ত। তবে দেশের বিভিন্ন এলাকাভেদে শর্ষের তেলের মূল্যবৃদ্ধির ভিন্ন ভিন্ন চিত্র পাওয়া গেছে।
ঢাকার কারওয়ান বাজারে গতকাল সন্ধ্যায় কোম্পানিভেদে বোতলজাত প্রতি লিটার শর্ষের তেলের দাম ছিল ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে রাঁধুনি ব্র্যান্ডের প্রতি লিটার শর্ষের তেলের বোতলের গায়ের দাম ৩৯০ টাকা। তবে তা ৩৮০ টাকায় বিক্রি করছেন দোকানিরা। এ ছাড়া মদিনা ব্র্যান্ডের প্রতি লিটারের বোতলের গায়ের দাম ছিল ২৯০ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়।
দোকানিরা বলছেন, এসব তেলেও এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ টাকা। তবে ঈদের পরও কোনো কোনো কোম্পানি নতুন করে আরেক দফা দাম বাড়িয়েছে। সেসব বোতল এখনো বাজারে আসেনি বলে আপাতত পুরোনো দামেই বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে চট্টগ্রামের বাজারে ঈদের পর বোতলজাত শর্ষের তেলের দাম এক লাফে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। চট্টগ্রামে রোজার সময় খুচরা পর্যায়ে বাজারে বেশির ভাগ কোম্পানির বোতলজাত শর্ষের তেল বিক্রি হয়েছিল প্রতি লিটার ২৮০-২৯০ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকায়। চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটের ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান বলেন, শর্ষের তেলের দাম ঈদের পর কোম্পানিগুলো এক লাফে ৭০-৮০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। রাঁধুনি, শঙ্খ, কেয়া, তীর, সুরেশসহ সব ব্র্যান্ডের শর্ষের তেলের দামই বেড়েছে।
শর্ষের তেল তৈরি হয় শর্ষের দানা বা বীজ থেকে। স্থানীয়ভাবে শর্ষের চাষ হয়। শর্ষের তেল তৈরির বীজের বড় অংশই স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করে কোম্পানিগুলো। কিছু কিছু কোম্পানি আমদানি করে সেগুলো মিলে ভাঙিয়ে তেল তৈরি করে। দেশে শর্ষের বীজের একটি বড় অংশ সংগ্রহ করা হয় পাবনা থেকে। আমাদের পাবনা প্রতিনিধি গতকাল রাতে জানিয়েছেন, সয়াবিন তেলের সংকট তৈরি হওয়ার পর থেকে শর্ষের তেল ও বীজের বাজারেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ঈদের আগে যে শর্ষের বীজ মানভেদে প্রতি মণ ৩ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গতকাল সেই দাম উঠেছে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়। পাবনায় গতকাল রাঁধুনি ব্র্যান্ডের প্রতি লিটার শর্ষের তেল বিক্রি হয়েছে ৩৮৫ টাকায়। ঈদের আগে এ দাম ছিল ৩৬০ টাকা।
কোম্পানিগুলো বলছে, দেশের কোথাও কোথাও শর্ষের বীজ প্রতি মণ ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিনের সংকট দেখা দেওয়ার পর থেকেই এর বীজের দামও বেড়ে গেছে বলে কোম্পানিগুলোর দাবি। জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বঙ্গ মিলারসের নির্বাহী পরিচালক নাসের আহমেদ বলেন, ‘মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে শর্ষের বীজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে গেছে। এখনো পুরোনো বীজে তৈরি তেল বাজারজাত করছি বলে আমরা দাম বাড়াইনি। তবে নতুন কেনা বীজ থেকে তৈরি তেল যখন বাজারে আসবে, তখন দাম বাড়বে।’
চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটের শাহজালাল স্টোর থেকে গত বৃহস্পতিবার শর্ষের তেল কিনেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা জোবায়ের উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সয়াবিন তেলের দাম এক লাফে লিটারে ৩৮ টাকা বাড়ল। এখন শর্ষের তেলও কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে।
পুষ্টি ব্র্যান্ডের শর্ষের তেলের বিক্রয়কর্মী নিউটন মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের আগে তাঁদের শর্ষের তেলের দাম ছিল ২৮০ টাকা। নতুন দাম প্রতি লিটার ৩৬০ টাকা। তবে এখনো পুরোনো দামে তাঁরা শর্ষের তেল সরবরাহ করছেন।