মুহূর্তেই মাটিতে মিশে গেল ৩৫ পাকা বাড়ি

নেই কোনো ধরনের দুর্যোগ বা প্রলয় তাণ্ডব। এরপরও কোনো কারণ ছাড়াই মাটির নিচে দেবে গেছে প্রায় ৩৫টি পাকা বাড়ি। বিম-কলাম দেওয়া এসব পাকা বাড়ি তলিয়ে গেছে মাটির গহ্বরে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের জহুরপুর গ্রামের এমন ঘটনায় ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। কী কারণে এমনটি ঘটেছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণও বলতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন। মর্মান্তিক এ ঘটনায় গৃহহীন হয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে পরিবারগুলো।

প্রথম দেখায় প্রকৃতিক দুর্যোগ বা যুদ্ধে বিধ্বস্ত কোনো জনপদ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এমন কিছুই ঘটেনি জহুরপুর গ্রামে। কোথাও মাটি দেবে গেছে আবার কোথাও হুড়মুড় করে ধসে গেছে দালান। সরেজমিনে এমনটিই দেখা গেছে কানসাটের পাগলা দাঁড়া ক্যানেলের জেলেপল্লী আর পার্শ্ববর্তী পাড়ায়। কয়েকদিনের ব্যবধানে এসব ঘরবাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

জেলেপল্লীর সুন্দরী রানী বলেন, সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি বাড়ির পাশ দিয়ে মাটিতে সামান্য ফাটল ধরেছে। ঘরের মেঝেও দেবে গেছে। কিছুক্ষণ পর দেখি পুরো বাড়ি আস্তে আস্তে মাটির নিচে বসে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে বাড়িটা প্রায় এক হাঁটু পরিমাণ মাটির নিচে ঢুকে গেল। এভাবে আস্তে আস্তে বিম-কলামের পুরো বাড়ি তলিয়ে গেল।

একই বক্তব্য প্রতিবেশী রেখা বেগম, শামসুন্নাহার, গ্রামপুলিশ সফিকুল ইসলামসহ আশপাশের মানুষের। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া এ ধরনের বিপর্যয়কে রহস্যজনক বলছেন তারা। তবে কেউ কেউ মনে করছেন পার্শ্ববর্তী পাগলা দাঁড়া ক্যানেলের পানি শূন্যতাই আকষ্মিক এ দুর্যোগের কারণ।

সামিউল ইসলাম নামে একজন জানান, পাগলা নদী খননের কারণে নিচু হয়ে গেছে নদীর স্তর, তাই ২-৩ দিন আগে ক্যানেলের পানি হঠাৎ নেমে গেছে। ক্যানেলে পানি থাকলে মাটিকে ফুলিয়ে রাখে। কিন্তু পানি না থাকার কারণে মাটি ভার হয়ে যাওয়ায় এসব ঘরবাড়ি নিচে বসে যাচ্ছে মনে হয়।

তবে এ কথার শতভাগ সত্যতা পাওয়া যায়নি। কারণ এই ক্যানেলে বছরে মাত্র কয়েক মাস পানি থাকে। বাকি সময় পানির স্তর নেমে যায়।

জলবায়ু পরিবর্তের কারণে এমন বিপর্যয় কিনা সে বিষয় মাথায় রেখে কারণ অনুসন্ধান করছে স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর। শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, যে বাড়িগুলো ভেঙে গেছে, সেগুলো সরানোর পর আমরা বুঝতে পারব সেখানকার মাটির কন্ডিশন কেমন। যদি আরো ঘরবাড়ি ভাঙার সম্ভাবনা থাকে, আমরা তাৎক্ষণিক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।

শিবগঞ্জের ইউএনও সাকিব আল রাব্বি জানান, ঘটনাটি আকস্মিক ও খুবই দুঃখজনক। এখানে যারা ভূমিহীন আছেন, তাদের আগে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। সরকারি জায়গায় সরকারি বাড়িতে তাদের রাখার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

Full Video


ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এটা দেখেছেন কি? দেখে নিন