ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের আহমেদাবাদ শহরের প্রধান প্রধান সড়কের পাশ থেকে আমিষজাতীয় খাবারের দোকান সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যের চারটি শহরে এ ধরনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
গতকাল সোমবার আহমেদাবাদ মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন জানায়, স্কুল, কলেজ ও ধর্মীয় স্থানগুলোর ১০০ মিটারের মধ্যে থাকা সড়কের ওপর থেকে আমিষজাতীয় খাবারের স্টলগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে।করপোরেশনের শহর পরিকল্পনা কমিটির চেয়ারম্যান দেভাং দানি বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেন, আজ মঙ্গলবার থেকে এ আদেশ কার্যকর হবে।
এর আগে রাজকোট, ভবনগর ও জুনাগাধ শহরেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। গুজরাট ভারতের ধনী রাজ্যগুলোর একটি। এটি দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্মভূমি। ২০১৪ সাল থেকে প্রায় ১৩ বছর ধরে তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব করে যাচ্ছেন।
ভাদোদারা ও রাজকোটে পৌর প্রশাসন দোকানদার ও হকারদের ডিমসহ আমিষজাতীয় খাবার ঢেকে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তাদের ভাষ্য, ‘এটি হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ করতে পারে।
ভাদোদারা পৌর করপোরেশনের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান হিতেন্দ্র পাটেলকে উদ্ধৃত করে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, মাছ, মাংস ও ডিমের স্টল অনেক বছর ধরে চলছে, কিন্তু এখন সময় এসেছে এর ইতি টানার। একই সঙ্গে বলা হয়, এসব জায়গা থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকির কারণ।
গুজরাটের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল গতকাল সোমবার বলেন, বিষয়টি নিরামিষ বা আমিষজাতীয় খাবারের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয় নয়। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মানুষ যা খেতে চায়, তা সে খেতে পারে। কিন্তু স্টলে যেসব খাবার বিক্রি হয়, তা ক্ষতিকর হতে পারবে না আবার এসব স্টলের কারণে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারবে না।’
গুজরাটে বিজেপির মুখপাত্র ইয়ামল ভিয়াস দাবি করেন, এই সিদ্ধান্ত পৌর করপোরেশনের, দলীয় নয়। তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘এটি বিজেপির সিদ্ধান্ত নয়। এটি পৌর করপোরেশনের সিদ্ধান্ত…এ নিয়ে দলের কোনো অবস্থান নেই। একটি বিষয় হলো যেটি তা হলো এসব স্টল যান চলাচলে কোনো বাধার কারণ হতে পারবে না। আমিষ খাবার নিয়ে বিজেপির কোনো আপত্তি নেই। যেসব খাবার স্বাস্থ্যকর নয়, সেসব খাবার নিয়ে আমাদের আপত্তি।’
এদিকে বিরোধী দল কংগ্রেসের ভাষ্য, বেকারত্ব ও মূল্যবৃদ্ধি থেকে মানুষের নজর অন্যদিকে ফিরিয়ে নিতে বিজেপির কৌশল এটি।
গুজরাটে কংগ্রেসের মুখপাত্র মনীষ দোশি আল-জাজিরাকে বলেন, বিজেপি মানুষকে কর্মসংস্থান তৈরি বা বিশুদ্ধ পানির যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। বিজেপির মূল অ্যাজেন্ডা হলো এ ধরনের গুরুত্বহীন বিষয় নিয়ে মেরুকরণ সৃষ্টি করা।
দোশি বলেন, গুজরাটের শহরে আমিষজাতীয় খাবারের স্টলের ওপর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা রাজ্যটিতে ধর্মীয় বিভেদ বাড়াতে বিজেপির একধরনের ‘নির্বাচনী ছলচাতুরী’।
কংগ্রেসের এই নেতা বলেন, ‘একজন কী খাবে, পান করবে বা পরিধান করবে, এটা তার ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। এটি তার ব্যক্তিগত পছন্দ। এটি সরকার মানুষের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না। এটি বিজেপির নির্বাচনী ছলচাতুরী। এটি আমাদের গণতন্ত্রের জন্য খুবই ভয়ংকর।’
আগামী বছর গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচন। এই রাজ্যে ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে বিজেপি সরকার ক্ষমতা পরিচালনা করে আসছে।আমিষভোজীরা বিভিন্ন রাজ্যে বিশেষ করে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে বিজেপি ও এর সহযোগী হিন্দু গোষ্ঠীগুলোর চাপের মুখে রয়েছেন।
গুজরাটে অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের রাজনীতিক শামসাদ পাঠান আল-জাজিরাকে বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে গরিব লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুনাফা করাতে এটি বিজেপির ‘গোপন অ্যাজেন্ডা’।
পাঠান বলেন, গুজরাটে আমিষজাতীয় খাবার বিক্রেতাদের বেশির ভাগই হয় মুসলিম, দলিত বা আদিবাসী। তাদের টার্গেট করে বড় করপোরেশনগুলোর স্বার্থে এটি করা হয়েছে।