স্কুলে যাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের শিখন-ঘাটতি নিরূপণ করা হবে। ঘাটতি অনুযায়ী তাদের করা হবে তিন ভাগ। এ স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ পাঠ-পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে। এর আলোকে ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে পাঠদান।
এবার এ স্তরের শিক্ষার্থীদের শুধু ঘাটতি পূরণের কার্যক্রম চলবে। শিক্ষক ধারাবাহিক মূল্যায়ন করবেন। কিন্তু কোনো পরীক্ষা হবে না।
প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য এ সুপারিশ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ১২ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত দেশের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা খুলছে। প্রথম দিন থেকেই প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষেত্রে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হবে।
সংস্থাটির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে মাধ্যমিক স্তরের জন্য এ ধরনের বিশেষ কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি। এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা এ প্রসঙ্গে যুগান্তরের সঙ্গে কথা বলেন।
তিনি জানান, জানুয়ারি থেকে অনুসরণের লক্ষ্যে মাধ্যমিক স্তরের জন্য আমরা একটি ‘রিম্যাডিয়াল’ (ঘাটতি পূরণের) পাঠ পরিকল্পনা তৈরি করেছিলাম। এবার স্কুল খোলা উপলক্ষ্যে তেমন কোনো পরিকল্পনা তৈরি করা হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) নির্দেশিকা পাঠিয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দেখভাল করছে। তার আলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলবে। তবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচির আলোকে উপযুক্ত পরিকল্পনা তৈরি করা হবে।
জানা গেছে, প্রাথমিক স্তরের জন্য ‘অ্যাক্সিলারেটেড রিম্যাডিয়াল লার্নিং’ (এআরএল) নামে একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। এ বছরে আর যে কটি কর্মদিবস অবশিষ্ট আছে সেগুলোকে বিবেচনায় রেখে এটি তৈরি করা হয়।
এছাড়া প্রথম ২ সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষার্থীর শিখন-ঘাটতি নিরূপণে টেস্ট বা মূল্যায়ন করা হবে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘র্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট’ (আরএটি)। রোববারের মধ্যে এ সংক্রান্ত নির্দেশিকা শিক্ষকের কাছে পৌঁছানো হবে ।
সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী, স্কুল খোলার পর এসএসসি ও এইচএসসি এবং পিইসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস সপ্তাহে ৬ দিন হবে। প্রথম থেকে চতুর্থ এবং ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ক্লাস হবে সপ্তাহে একদিন।
রোববার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয় সামনে রেখে বৃহস্পতিবার মাউশি ৯ ভাগে ৬৩ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর’ (এসওপি)। এই ৯ ভাগের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষার্থীদের জন্য যথাক্রমে ১৪ ও ৮টি অনুসরণীয় নির্দেশনা আছে।
এছাড়া শিক্ষক, অভিভাবকদের জন্য ৮টি করে, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির জন্য ৫টি এবং বাকিগুলো শিক্ষার উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জন্য। পৃথক আরেক নির্দেশনায় প্রতিদিন বিকাল ৪টার মধ্যে মনিটরিং রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে মাঠপ্রশাসনকে।
পাশাপাশি মনিটরিং কমিটি গঠনের জন্য বলা হয়। উভয় নির্দেশনা মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুকের স্বাক্ষরে জারি হয়েছে। তবে খোলার পরে পাঠ-পরিকল্পনা কী হবে- এ বিষয়ে জানতে বারবার যোগাযোগ করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। নির্দেশনাগুলো মাউশিও ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, বিগত দেড় বছর ক্লাস বন্ধ থাকলেও ২ বছরের ঘাটতি ধরেই আগানো হচ্ছে। কেননা, গত বছরের ১৭ মার্চ স্কুল বন্ধ হয়। সাধারণত প্রথম কয়েক মাস স্কুলে লেখাপড়া হয় না। এ বছর যারা দ্বিতীয় শ্রেণিতে আছে, তারা গত বছর প্রথম শ্রেণিতে ছিল। ধরে নেওয়া হয়েছে, গত বছরও তাদের লেখাপড়া হয়নি। আবার এখন যারা প্রথম শ্রেণিতে আছে, তাদের এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক লেখাপড়াই হয়নি।
এভাবে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় শ্রেণিতে ছিল, যাদের গত বছর ও এ বছর শেখা হয়নি। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে একটি ‘এআরএল’ গাইডলাইন তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।
গাইডলাইন অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের স্কুলে অবস্থানটা আনন্দময় করা হবে। দীর্ঘদিন স্কুলে না আসায় শিক্ষার্থীদের মানসিক জড়তা তৈরি হয়েছে। তা কাটানোর জন্য প্রথমদিন খেলাধুলার ব্যবস্থা ও সার্বিক খোঁজখবর নেওয়া হবে।
পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের চলতি বছর ও আগের বছরের পাঠ্য থেকে ঘাটতি চিহ্নিত করা হবে। বিশেষ করে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ঘাটতি বের করা হবে সাক্ষরতা পরীক্ষা করে। এ ক্ষেত্রে ভাষা ও গণিতের জ্ঞান বা বাংলা, ইংরেজি এবং অঙ্ক বিষয় বেছে নেওয়া হবে।
তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও ঘাটতি দেখা হবে এ দুটি দিকের। পাশাপাশি প্রধান বিষয়গুলোতে বাড়ির কাজ দেওয়া হবে। খোলার পরে প্রথম ২ সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষকরা এই টেস্ট করে ফেলবেন।
মূল্যায়নে শিক্ষার্থীদের তিন ভাগ করা হবে। এগুলো হচ্ছে, মধ্যম মানের চেয়ে ভাল, মধ্যম, এবং মধ্যম মানের নিচে। এদের মধ্যে মধ্যম মানের নিচে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলবেন শিক্ষকরা। পাশাপাশি তাদের প্রতি বিশেষ নজর দেবেন।
ওয়ার্কশিটের মাধ্যমে শিক্ষকদের কাছে শিক্ষার্থীদের এক ধরনের প্রোফাইল চলে এসেছে। আর এখন মূল্যায়নের ফলে শিক্ষার্থীর ঘাটতি সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
এনসিটিবি সদস্য অধ্যাপক রিয়াজুল হাসান বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ক্লাস হবে। এখন শুধু ক্লাসের প্রতিই জোর দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ধারাবাহিক মূল্যায়নের কথা আগে থেকে আছে। তাই কোনো পরীক্ষা না নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ক্লাসে শিক্ষক শুধু শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করবেন।