স্বামী বহাল তবিয়তে জীবিত থাকার পরেও ১৩ জন নারী নিয়মিত পেয়ে যাচ্ছেন বিধবা ভাতা। অবাক করা এই ঘটনাটি ঘটেছে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারান্দিয়া ইউনিয়নের ৩৭৮ জন নারী সরকারিভাবে বিধবা ভাতা পান। তাদের মধ্যে ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের রয়েছেন ৫০ জন। তারা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ও উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে এ ভাতা উত্তোলন করেন। কিন্তু ৫০ জনের মধ্যে ১৩ জনের স্বামী জীবিত ও বাড়িতে থাকলেও ২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে ওই ১৩ জন সধবা নারী নিয়মিত বিধবা ভাতা উত্তোলন করে আসছেন বিধবা ভাতার টাকা।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সুমন মিয়া নামের স্থানীয় এক যুবক জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করার পরও বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়।
ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কালাম খান এবং স্থানীয় উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কিছু অসাধু লোকজনের যোগসাজশে এই অনিয়ম হয়েছে এবং ২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে ওই ১৩ জন সধবা নারী নিয়মিত বিধবা ভাতা উত্তোলন করে আসছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জেলা প্রশাসক বরাবর করা লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার পূর্বধলা উপজেলায় ৪ হাজার ৫৪৩ জন বিধবা ভাতাভোগী রয়েছেন। তাদের মধ্যে উপজেলাটির নারান্দিয়া ইউনিয়নে ৩৭৮ জন বিধবা ভাতা পান। এ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিধবা ভাতাভোগী রয়েছেন ৫০ জন। এ ৫০ জনের মধ্যে ১৩ জন নারীর স্বামী বর্তমানে জীবিত আছেন।
এ নিয়ে অভিযোগকারী যুবক সুমন মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, এলাকায় স্বামী-স্ত্রী মিলে ঘরসংসার করছেন, স্বামীও উপার্জনশীল। কিন্তু স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম প্রকৃত বিধবাদের ভাতার কার্ড না দিয়ে এসব সধবা নারীকে বিধবা ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন। আবুল কালাম তার সৌদিপ্রবাসী সহোদর ভাই শহীদ খানকেও প্রতিবন্ধী দেখিয়ে ভাতা উত্তোলন করেছেন। ঘটনাটি জানার পর আমি জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
এ বিষয়ে কয়েকজন বিধবা ভাতাপ্রাপ্ত এক সধবা নারীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ইউপি সদস্য আবুল কালাম দরিদ্র ভাতার কার্ড করে দেবেন বলে তাদের কাছ থেকে ছবি ও ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে গিয়েছিলেন। এ জন্য ওই ইউপি সদস্য তাদের কাছ থেকে কিছু টাকাও নেন বলে জানান তারা। এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন বিধবা ভাতাভোগী ওই নারীদের কয়েকজনের স্বামীও।
নেত্রকোনা জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আলাউদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে কার্ডগুলো বাতিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান জানান, ঘটনাটি তদন্ত করতে এরই মধ্যে পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সমাজসেবা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।