জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্য উৎপাদন নিয়ে সংকটে পড়েছে পৃথিবীর অনেক দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি অংশ নেওয়া দেশগুলো অর্থের জোরে পার পেয়ে গেলেও দরিদ্র দেশগুলোতে এরই মধ্যে মারাত্মকভাবে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকা মহাদেশের উপকূলে অবস্থিত দ্বীপ রাষ্ট্র মাদাগাস্কার প্রথম দেশ, জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতার অভিজ্ঞতা যে দেশের সবার প্রথমে হচ্ছে। চার বছর ধরে বৃষ্টি হচ্ছে না এ দেশে। হাজার হাজার মানুষের ক্ষুধার জন্য হাহাকার আর খাদ্যের অনিশ্চয়তা চরমে পৌঁছেছে।
গত ৪ দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরা দেখছে মাদাগাস্কার। কৃষিকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। কখনো কখনো বেঁচে থাকার জন্য খেতে হচ্ছে পোকামাকড়।জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সদস্য শেলে ঠাকরি জানান, ভয়াবহ এ বিপর্যয় যুদ্ধের জন্য নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য নেমে এসেছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, এখানকার ৩০ হাজার মানুষ চরম খাদ্য অনিশ্চয়তায় ভুগছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এ খাদ্যসংকট সর্বোচ্চ। অনাবৃষ্টি যদি অব্যাহত থাকে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।ঠাকরি আরও জানান, এটা তাদের ওপর নিতান্তই অবিচার কারণ জলবায়ু পরিবর্তনে তাদের কোনো ভূমিকাই নেই। তারা জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে না, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতার কারণে তারা ঠিকই পুড়ছে।
মাদাগাস্কারের আম্বোসারি জেলার ফান্দিওভা গ্রামে সম্প্রতি জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সদস্যরা যান। তারা সেখানে গিয়ে দেখতে পান সেখানকার মানুষ পঙ্গপাল খাওয়া শুরু করেছে।একজন নারী জানান, পোকামাকড়গুলো খাওয়ার আগে যথেষ্ট পরিষ্কার করে নেওয়া হয়। কিন্তু এখানে পানিও নেই পর্যাপ্ত। তিনি আরো জানান, গত ৮ মাস ধরে প্রতিদিন সে আর তার সন্তানরা পঙ্গপাল খাচ্ছেন, কারণ তাদের কাছে খাওয়ার আর কিছু নেই। আর বৃষ্টি না হলে কোন ফসলও ফলানো যাবে না।
পৃথিবীর খরাপ্রবণ মাটিতে দাঁড়িয়ে আরেকজন জানান, ক্যাকটাসের পাতা ছাড়া তাদের কাছে খাওয়ার আর কিছুই নেই। তিনি জানান, সম্প্রতি খাবারের অভাবে তার স্বামী মারা গেছেন। তাদের জীবন এখন খাবারের জন্য ক্যাকটাস পাতার দিকে তাকিয়ে থাকা।
মাদাগাস্কারের এই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকোপ ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
মাদাগাস্কারের দক্ষিণাঞ্চলেও খরার প্রভাব পড়ছে ভয়াবহভাবে। অনেক শিশু রাস্তায় খাবারের জন্য ভিক্ষা করছে। বাজারে খাবারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে গেছে।
মানুষ টাকা জোগাড় করে খাবার কেনার জন্য নিজেদের জমি বিক্রি করে দিচ্ছে। চ্যারিটিতে কাজ করা কর্মীরা বলছেন, যেসব স্থানে শস্য আছে, সেই স্থানগুলো সংরক্ষণের জন্য দিন রাত জেগে পাহারা দিতে হচ্ছে তাদের। কারণ খাবারের জন্য মরিয়া মানুষ যে কোনো সময় আক্রমণ করতে পারে। সবকিছুই এখানকার আবহাওয়ার মতো অনিশ্চিত হয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়ের সর্বপ্রথম সাক্ষী হতে যাচ্ছে এ মাদাগাস্কার।