পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত, সন্ধ্যা হলেই ভাঙন শুরু

শরীয়তপুরে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। গত চার-পাঁচ দিনের নদী ভাঙনে জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর ইউনিয়নের ১ও ৩ নং ওয়ার্ড ও বাবুরচর এলাকায় ব্যাপক নদী ভাঙন হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুন্ডেরচর ইউনিয়নের বাবুরচর এলাকার বেপারী কান্দি, খা কান্দি এবং ১ ও ২নং ওয়ার্ডের লুডু মাদবর কান্দি, আপতু বেপারী কান্দি ও মৃধা কান্দি গ্রামের পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত চার দিনের ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় দুইশ বাড়ি। এত দ্রুত ভাঙছে যে বাড়ি-ঘর সরিয়ে অন্যত্র নেয়ার সময়ও মিলছে না। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পানি বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সময় ভাঙন বেশি হয়।

মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে কুন্ডেরচর ইউনিয়নের লুডু মাদবর কান্দি, আপতু বেপারী কান্দি ও বাবুরচর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো তাদের বাড়িঘর ভেঙে ট্রলারে বা মাথায় করে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন। বাপ-দাদার ভিটে-মাটি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন তারা। তাদের চোখে মুখে শুধু বিষাদের ছাপ। মুখের দিকে তাকানো যায়না।

লুডু মাদবর কান্দি গ্রামের আব্দুল মান্নান রাঢ়ী আরটিভি নিউজকে জানান, কয়েকদিন ধরে আমাদের এখানে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। আমাদের আশপাশের সব বাড়ি-ঘর ভেঙে নিয়ে গেছে। আজ আমাদেরটাও নিয়ে গেল। এত দ্রুত ভাঙে যে, ঘর সরাইয়া অন্য জায়গায় নেওয়ার সুযোগ পাই না। এমনে ভাঙতে থাকলে আমাদের এলাকায় কোনো বাড়ি-ঘরই থাকব না। আমরা এখন বাজারের পাশে একটা খালি জায়গায় নিয়ে ঘরগুলো রাখছি।

নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত শহরবানু আরটিভি নিউজকে বলেন, সারাটা জীবন গেল ভাঙতে ভাঙতেই। এই জীবনে কতবার যে বাড়ি-ঘর ভাঙছে তার কোনো হিসাব নাই। মেম্বার-চেয়ারম্যানরা আসতো কিছু চাল-ডাল দিয়া যাইতো, ওই পর্যন্তই শেষ। আর কেউ কোনো খোঁজখবর নিতো না। প্রতিবারই বর্ষা আইলে ভাঙে। কোনো ত্রাণ বা সাহায্য-সহযোগিতা চাই না। এখন চাই শুধু নদী ভাঙন থেকে বাঁচতে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, আমাদের এইখানে যেন বেড়িবাঁধ কইরা দেয়। তাইলে আমরা পয়-পোলাপান নিয়ে থাকতে পারুম।

শরীয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (এসডিএস)-এর জোনাল ম্যানেজার মো. মনির হোসেন জানান, গত শুক্রবার থেকে কুন্ডেরচর এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দেয়। শুরু থেকেই এসডিএস নদী ভাঙা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কোনো বাহন পাচ্ছিল না। আমরা তাৎক্ষণিক তাদের দুটি ট্রলারের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এছাড়া আমাদের কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন। আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে আমাদের তালিকা অনুযায়ী এখানে ১৬৬টি পরিবার নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবীব আরটিভি নিউজকে বলেন, উজানের পানি নেমে এসে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কুন্ডেরচর এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ওই এলাকায় বালুমাটি হওয়ায় দ্রুত ভেঙে যায়। ভাঙন রোধে আমরা জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কার্যক্রম শুরু করছি। পরবর্তীতে বিভাগের আওতায় এনে ভাঙন রোধের চেষ্টা করব।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান ভূঁইয়া আরটিভি নিউজকে বলেন, আমরা শুনেছি কুন্ডেরচর ইউনিয়নের পদ্মার ওই পারে কিছু এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে আমি মেম্বার-চেয়ারম্যানদের বলেছি তালিকা করে পাঠানোর জন্য। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের তালিকা পাঠালে আমরা তাদের ত্রাণ সহায়তাসহ অন্যান্য সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করব। এছাড়া আমি নিজেও ভাঙন কবলিত এলাকায় যাব এবং পরিদর্শন করে এসে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

Full Video


ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এটা দেখেছেন কি? দেখে নিন