কয়েক দিন ধরে দেশের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। গতকাল সোমবারও মেঘনা অববাহিকা বাদে অন্য নদ-নদীর পানি বাড়া অব্যাহত ছিল। তিস্তার পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে দেশের একাধিক জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।
এদিকে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে ফের লঘুচাপ সৃষ্টির আশঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এর প্রভাবে আজ মঙ্গলবার রাত বা আগামীকাল বুধবার থেকে উপকূলীয় এলাকায় ভারি বৃষ্টি হতে পারে। একদিকে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল আসছে, অন্যদিকে দেশে বৃষ্টিপাত বাড়লে নদ-নদীর পানি আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়াবিদ মো. আশরাফ উদ্দিন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় এবং তত্সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কাল দুপুরে বা এরপর এই লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এটি মূলত ভারতের ওড়িশার দিকে যাচ্ছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ভারি বৃষ্টি হতে পারে। তবে লঘুচাপটি খুব বেশি স্থায়ী হবে না।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল জানায়, মেঘনা অববাহিকার নদীগুলো ছাড়া দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা অববাহিকার অঞ্চলগুলোর বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে পানি বিপত্সীমা অতিক্রম করতে পারে। এর ফলে রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র আরো বলছে, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এর ফলে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কক্সবাজার জেলা এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলের নদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়তে পারে।
গতকাল সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ সহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। এদিকে ভারি বর্ষণসহ উজানের ঢলে নদীতে পানি বাড়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়ায় চরাঞ্চলসহ তীরবর্তী এলাকার সৃষ্ট বন্যায় দুই হাজার ৫০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিন ইউনিয়নে দুর্ভোগে থাকা পরিবারগুলোর জন্য সরকারিভাবে ১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ, চরইচলী, কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল, চর মটুকপুর, বিনবিনা এলাকায় দুই হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু জানান, তাঁর ইউনিয়নে এক হাজার ৩০০ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। লক্ষ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, তাঁর ইউনিয়নের চারটি চরে এক হাজার এবং নোহালী ইউনিয়নে ২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
তিস্তায় টানা চার দিনে পানি বাড়া-কমায় ভোগান্তিতে পড়েছে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী ও গয়াবাড়ী ইউনিয়নের ১৫টি চর গ্রামের পাঁচ হাজার পরিবার।