বাসায় অভিযান চালিয়ে ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমনিকে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ গ্রেফতার করে র্যাব। গত ৪ আগস্ট পরীমনিকে আটকের পর র্যাব সদরদপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরদিন সন্ধ্যায় বনানী থানায় তাকে হস্তান্তর করে র্যাব। এরপর র্যাব বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে। সেই মামলায় দুই দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরীমনিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশে এই নায়িকা কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন।
এ ঘটনায় শোবিজ অঙ্গনের অনেকেই পরীমনির পক্ষে এসে দাঁড়িয়েছেন গত কয়েকদিনে। বরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা কাজী হায়াৎ পরীমনিকে নিয়ে গণমাধ্যমে মতামত লিখেছেন। আর আদালতে পরীর পক্ষে লড়ছেন চিত্রনায়ক ও আইনজীবী আমান রেজা। পরীমনির পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাবেক সভাপতি ও দেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিব খান। আরও অনেকেই পরীর পাশে দাঁড়িয়েছেন। তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তার মুক্তির দাবি তুলেছেন।
এবার পরীমনির পক্ষ নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সোমনূর মনির কোনাল। সেই পোস্টে এই সংগীতশিল্পী কিছু প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন। যদিও তিনি শুরু থেকেই পরীমনির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। অনেক কথাও বলে আসছেন।
কোনালের সেই পোস্ট হুবহু যুগান্তর পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো:
খবর পড়ছিলাম বসে বসে। হঠাৎ মনে পরে গেলো গত বছরের সেই ঘটনার কথা। সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুকে ঘিরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো যখন মাদক মামলায় দীপিকা পাড়ুকোনকে তলব করলেন (বলা হয় মাদক সংশ্লিষ্ট একটি হোয়াটস্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিন ছিলেন দীপিকা), দীপিকা তখন ছিলেন মুম্বাইয়ের বাইরে, শুটিংয়ে ব্যস্ত। তাই তিনি পরদিন চার্টার্ড বিমানে করে ফিরলেন মুম্বাই (তাকে সম্মান সূচক সেই সময় এবং স্পেস দেয়া হয়েছিল এবং সেই সময়টুকু দীপিকা কাজে লাগিয়েছিলেন তার আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতে)। পুলিশের মনে হলো এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দীপিকার বাসায় এবং থানার সামনে হতে পারে হট্টগোল, দীপিকাকে হেয় করতে পারে জনগণ, তার সম্মানহানি হতে পারে, পরতে হতে পারে বাড়তি ঝামেলায়। তাই তখন দাদার পুলিশ স্টেশন থেকে একটা টিম মোতায়েন করা হলো দীপিকার বাড়ির সামনে। তাকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং সম্মান দিয়েই জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। দীপিকা ওই মামলার সঙ্গে আদৌ জড়িত কি না, বা কতটুকু জড়িত, তা জানবার আগ পর্যন্ত পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং সম্মান তাকে দেওয়া হয়েছিল। এটা একজন সাধারণ নাগরিকেরই প্রাপ্য; সেখানে দীপিকা তাদের দেশের সম্পদ!
মনে প্রশ্ন জাগে,
১. আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি পরীমনিকে ডাকত, সে কি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যেত না থানায়? এদিকে পরীমনির ১০৫ বছরের বৃদ্ধ নানা আদালত প্রাঙ্গণে ছুটে গিয়েছিলেন এই কঠিন সময়েও! অথচ তাকে দেখা করতেই দেয়া হয়নি পরীর সঙ্গে। টেনে হেঁচড়ে পরীকে জাকড়ে ধরে নেয়া হচ্ছে, আনা হচ্ছে, যেন তিনি দেশ ও জাতির বিশাল কোনো ক্ষতি করে ফেলেছেন!!
২. পরীর পার্সোনাল ভিডিও জনসম্মুখে এসেছে। কীভাবে আসল? যে ইউটিউব চ্যানেল থেকে এই ভিডিও প্রকাশ করা হলো, সেই চ্যানেল মালিক কী করে পেল এই ভিডিও? তার মানে শুধু এই ভিডিও নয়, আরও কিছু পৌঁছেছে তার কাছে! উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই ঘৃণিত কাজ কারা করছে? জানতে পারব কি কোনোদিন?
৩. আমার পরিবার রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক পরিবার। জন্মের পর থেকেই দেখছি সংগঠন বা সমিতি, কীভাবে তাদের সদস্যদের পাশে দাঁড়ায়, সদস্যদের জন্য সংঘবদ্ধ থাকেন। অথচ চলচিত্রের সেই সমিতি পরীর সদস্যপদই সাময়িক স্থগিত করে দিলো। তা হয়তো তাঁদের সংবিধান অনুযায়ী যা আছে করুক। কিন্তু তাঁদের সংবিধানে কি নেই যে, একজন শিল্পীর মন্দ যেমন দেখব, ভালোটাও দেখতে হবে!? পরীর কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না, ওর সঙ্গে কোনো অবিচার হচ্ছে কি না, পরী ঠিক মতো আইনের সহযোগিতা পাচ্ছে কি না, এটা দেখাও কি সমিতি বা সংগঠনের বিধানে নেই? তাহলে কেন, এবং কাদের স্বার্থে এই সমিতি/সংগঠন!?
৪. তালি এক হাতেই বেজেছে এতদিন? তবে তো সেটা বিশ্ব রেকর্ড! পরীর দিকে আঙুল উঁচানো এত এত খারাপ কাজ, সেগুলো সে একা করেছে? একা করলে তো আর কথাই নেই। নিজের ক্ষতি নিজে করছে, অন্যকে ডিসটার্ব করেনি! কিন্তু তালি তো আসলে এক হাতে বাজে না! সেই তালির আরেক হাত কোথায়? তালির এই হাতগুলো কারা?! কেন তাদের নাম গোপন রাখা হচ্ছে? মান-সম্মানের স্বার্থে? তাহলে পরীর যে মান-সম্মান বিকি–কিনি হয়ে গেলো, সেটার কি হবে?????
প্রশ্নগুলো রয়ে গেল…. উত্তর???
আমি এই দেশের একজন ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র শিল্পী হয়ে, তার সহকর্মী হয়ে, একজন নারী হয়ে, এ দেশের একজন নাগরিক হয়ে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাতে চাই, বাবা-মা হারা পরী যেন ন্যায়বিচার পায়। তাকে আলাদা করে সহযোগিতা করতে হবে না। তার প্রাপ্যটুকু যেন নিরপেক্ষভাবে তাকে দেওয়া হয়। আমার দেশের বিচার বিভাগের ওপর আমি আশাবাদী। এটুকু হতেই চাই। এটুকু হতেই হবে!