মোঘল সম্রাট শাহজাহান তার প্রিয়তমা স্ত্রী মততাজের স্মৃতি রক্ষার্থে তৈরি করেছিলেন তাজমহল। সাধারণ মানুষও প্রিয়জনের স্মৃতি রক্ষার্থে যথাসাধ্য চেষ্টা করেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের রাজধানী অস্টিন শহরের এক স্টার্ট আপ প্রতিষ্ঠান প্রিয়জনের স্মৃতিরক্ষার বিষয়টিকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ইটার্নাভা নামে প্রতিষ্ঠানটি মৃত মানুষ বা পোষা প্রাণীর ছাই কিংবা চুল থেকে হীরা তৈরি করে!
ব্যবসার ধারণাটি শুনতে অবাক লাগলেও, প্রিয়জনের স্মৃতি হিসেবে সেই হীরা সংরক্ষণ করার ভাবনা কিন্তু দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি দারুণ ব্যবসা সফল। ২০২০ সালে তারা দ্বিগুণেরও বেশি লাভ করেছে। আর এই দারুণ ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ১ কোটি ডলার অনুদান পেতে চলেছে।
তবে এই অদ্ভুত ব্যবসার ভাবনার পেছনে রয়েছে ইটার্নাভার সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান প্রধান নির্বাহী অ্যাডেলা আর্চারের ব্যক্তিগত জীবনের একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা।
২০১৭ সালের আগেই আর্চার গবেষণাগারে তৈরি হীরা বিক্রির স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান তৈরির কথা ভাবছিলেন। সেই সময়ই মাত্র ৪৭ বছর বয়সে ক্যান্সারের কারণে মারা যান আর্চারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহকর্মী ট্রেসি কাফম্যান। ট্রেসির কাছের বন্ধু আর্চার তার দেহাবশেষ পান।
প্রিয় বন্ধুর দেহাবশেষ সংরক্ষণের জন্য ভালো একটা উপায় খুঁজছিলেন আর্চার। এ সময় এক বিজ্ঞানীর সাথে এ ব্যাপারে আলাপ হয় আর্চারের। সেই বিজ্ঞানী দেহাবশেষের ছাইতে থাকা কার্বন দিয়ে একটি হীরা তৈরি করা যেতে পারে বলে পরামর্শ দিয়েছিলেন। টেসির ছাই থেকে তৈরি হীরাটিই ছিল ইটার্নাভার তৈরি প্রথম হীরা। আর আর্চারই ছিলেন নিজের তৈরি স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠানের প্রথম ক্রেতা।
এরপর আর আর্চারকে পেছনে তাকাতে হয়নি। চার বছরে ইটার্নাভা এক হাজারেও বেশি গ্রাহকের জন্য দেড় হাজারের বেশি হীরা তৈরি করেছে। ইটার্নাভার তৈরি সবচেয়ে কম দামের হীরার দাম থাকে ২,৯৯৯ ডলার। হীরার আকার যত বড় হয়, দামও তত বাড়ে।
ইটার্নাভার তৈরি ৪০ শতাংশ হীরাই পোষা প্রাণীর ছাই দিয়ে তৈরি।