শরীয়তপুর-চাঁদপুর নৌপথের আলুর বাজার ফেরিঘাটে যানজটে আটকা পড়েছে কোরবানির পশুবাহী শতাধিক ট্রাক। তীব্র গরমে দীর্ঘ সময় আটকে থাকায় গরু মারা যাচ্ছে, অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গরুর ব্যাপারীরা লোকসান ঠেকাতে ঘাট এলাকায় অসুস্থ গরু জবাই করে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এমন তিনটি গরুর গোশত ২৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুটি এবং আজ শুক্রবার দুটি অসুস্থ গরুর গোস্ত ফেরিঘাটে বিক্রি করা হয়েছে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার, স্থলবন্দর বেনাপোল, ভোমরা, নৌবন্দর মোংলা ও পায়রা বন্দরের পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী যানবাহন শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়ক দিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে। ওই যানবাহনগুলো শরীয়তপুরের আলুর বাজার ও চাঁদপুরের হরিনা ফেরিঘাট দিয়ে মেঘনা নদী পারাপার হয়। বৃহস্পতিবার থেকে পণ্যবাহী গাড়ির পাশাপাশি যাত্রীবাহী গাড়ি ও কোরবানির পশুবাহী গাড়ির চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত পারাপার না হতে পেরে আলুর বাজার ফেরিঘাটে অন্তত ১ হাজার বিভিন্ন ধরনের গাড়ি আটকা পড়েছে। এর মধ্যে পশুবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে শতাধিক। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ফেরিঘাটে আটকে থাকা পশুবাহী গাড়িতে ৩২টি গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে। যার মধ্যে ৯টি গরু মারা গেছে। আর অসুস্থ গরু থেকে ৪টি গরু জবাই করে বিক্রি করা হয়েছে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রতি কেজি গরুর মাংস মাত্র ২৭০ টাকা দামে বিক্রি করা হয়েছে।
গরুর ব্যাপারীরা লোকসান ঠেকাতে ঘাট এলাকায় অসুস্থ গরু জবাই করে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এমন তিনটি গরুর গোশত ২৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ফেরিঘাটের কাছাকাছি খায়েরপট্টি এলাকায় যানজটে আটকা পড়ে যশোরের গবাদিপশুর ব্যবসায়ী নুরুল আলমের ৪টি গরুসহ একটি ট্রাক। শুক্রবার বিকেলে ফেরিঘাটের ট্রাক টার্মিনাল সড়কের মুখে ট্রাকটি এলে তাঁর দুটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন তিনি একটি গরু জবাই করেন। নুরুল আলম বলেন, পশুবোঝাই ট্রাকসহ তাঁকে আটকা থাকতে হয়েছে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময়। খোলা সড়কে তীব্র গরমে ৩টি গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ১টি গরু মারাও গেছে। ১টির অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে গেলে তাৎক্ষণিক গরুটি জবাই করে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্রেতা ধরতে ২৭০ টাকা কেজিদরে বিক্রি করেন।
আলুর বাজারের বাসিন্দা মো. মহসিন সরকার বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। নদীতে মাছ শিকার করে জীবন চালাই। বাজারে গরুর মাংসের দাম অনেক। বাড়িতে নিতে পারি না। সস্তায় পেয়ে আজ এক কেজি কিনেছি। শুনেছি অসুস্থ গরু জবাই করেছে। সস্তা তো, তাই আর অত কিছু খোঁজ নিইনি।’
শরীয়তপুর-চাঁদপুর নৌপথের আলুর বাজার ফেরিঘাটে শতাধিক পশুবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে। শুক্রবার বিকেলে তোলা
শরীয়তপুর-চাঁদপুর নৌপথের আলুর বাজার ফেরিঘাটে শতাধিক পশুবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে। শুক্রবার বিকেলে তোলাপ্রথম আলো
চরসেনসাস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আলুর বাজার ফেরিঘাটের ইজারাদার মো. জিতু মিয়া ব্যাপারী বলেন, কোরবানির জন্য বিক্রি করতে আনা গরু অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে ঘাটে ছুটে যান তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে ঘাট এলাকায় অসুস্থ গরুর বিশ্রামের জন্য গাছের ছায়ায় খোলা জায়গার ব্যবস্থা করে দেন। ব্যবসায়ীদের কয়েকটি গরু মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। লোকসান এড়াতে কয়েকটি অসুস্থ গরু জবাই করে বিক্রি করে দিয়েছেন ব্যাপারীরা এমন খবর শুনেছেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিটিসি) আলুর বাজার ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক আব্দুল মোমেন বলেন, কোরবানি সামনে রেখে ঘাটে প্রতিদিন গড়ে ২৫০টি পশুবোঝাই ট্রাক পারাপার করা হচ্ছে। ঘাটে একসঙ্গে অনেক ট্রাক আসায় পারাপারে সময় লাগছে। বেশ কিছু গরু অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়েছেন। তবে ঘাটে কোনো গরু জবাই বা বিক্রি করা হয়েছে কি না, সেই তথ্য তাঁদের কাছে নেই বলে তিনি জানান।