মেসেজ অ্যাপে অপরাধ দমন

বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রতিদিনই অপরাধের মাত্রা বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অপরাধীরাও নিয়মিত কৌশল পাল্টাচ্ছে। কিন্তু মেসেজ অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে যে আন্ডারগ্রাউন্ডের অপরাধীদের ধরা যাবে, এমনটা অন্তত অপরাধীরা ভাবতে পারেনি। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এএফবিআই এএনওএম নামের একটি মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে আঠারোটি দেশে স্টিং অপারেশন চালিয়ে আট শতাধিক অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া অপরাধীদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিলেন।

অপরাধীদের মোবাইলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই এএনওএম অ্যাপটি গোপনে পাঠানো হয়েছিল। এই অ্যাপের মাধ্যমে পুলিশ অপরাধীদের মোবাইল আলাপ থেকে শুরু করে যাবতীয় তথ্য রেকর্ড করে। মাফিয়াদের সংশ্লিষ্ট মাদক অপরাধীরা ছিল পুলিশের তালিকার শীর্ষে। ২০১৮ সাল থেকে সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাদের আটক করা হয়। এদের বেশিরভাগেরই অবস্থান ছিল অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে। আটকরা সবাই কোনো না কোনোভাবে মাদক চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত ছিল।

গত মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে বলেন, শুধু নিজ দেশেই নয়, সংঘবদ্ধ অপরাধীদের দমনে ২০১৮ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী এই অপারেশন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। অ্যানম নামের একটি গোপনীয় অ্যাপের মাধ্যমে অপরাধীদের লোকেশন শনাক্ত করা যায়। এছাড়া এর মাধ্যমে অপরাধীদের যে কোনো ধরনের ডিজিটাল যোগাযোগের সংকেত রিয়েল টাইমে পাওয়া যায়। ফলে কমানো গেছে মাদক চোরাচালানসহ অনেক সংঘবদ্ধ অপরাধ।

অস্ট্রেলিয়ার পুলিশও ব্যবহার করছে এই অ্যাপটি। ফলে দেশটি থেকে কমেছে গোলাগুলির মতো অপরাধ। অ্যাপটি ব্যবহার করে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ আটক করতে পেরেছে অন্তত দুইশো অপরাধীকে। উদ্ধার করা হয়েছে ৩ হাজার কেজি মাদক। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পুলিশ এজেন্সি ইউরোপোল এই অপারেশনকে ট্রোজান শিল্ড বা গ্রিনলাইট হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার ৪ হাজার পুলিশ সদস্য অ্যাপভিত্তিক অপরাধ দমন কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত। এছাড়া বিশ্বজুড়ে ৯ হাজার পুলিশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এই অ্যাপ কার্যক্রমে। অ্যাপটি মূলত তৈরি করেছে এফবিআই। সংস্থাটি তাদের তথ্যদাতাদের মাধ্যমে অ্যাপটি আন্ডারওয়ার্ল্ডে ছড়িয়ে দেয়। এর আগেও এমন একটি চেষ্টা চালিয়েছিল এফবিআই। কিন্তু তখন বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে অপরাধীরা সতর্ক হয়ে যায় এবং সহজে এনক্রিপ্ট করা যায় না এমন মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে শুরু করে। এতে এফবিআই নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।

অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ বিবিসিকে জানিয়েছে, ‘অপরাধীরা এমন মোবাইল ব্যবহার করে যা দিয়ে ইমেইল করা যায় না। একই প্ল্যাটফর্মের মোবাইল না হলে আপনি যোগাযোগ করতে পারছেন না এই সময়ে।’ দেশটির মাদক পাচারকারীদের মধ্যে শীর্ষে থাকা হাকান আয়িককে টার্গেট করে অভিযানটি শুরু হয়। আন্ডারওয়ার্ল্ডে এক ছদ্মবেশী তথ্যদাতার মারফত হাকানকে একটি মোবাইল দেওয়া হয়, যার মধ্যে এএনওএম অ্যাপটি গোপনে দেওয়া ছিল। আয়িককে টার্গেট করার পেছনে কারণ ছিল অস্ট্রেলিয়া পুলিশের। কারণ আয়িক এমন অপরাধী যিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত তার ছবি দিত। তুরস্কে তার ডেনিশ স্ত্রীকে নিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করত আয়িক। তার মতো অপরাধীদের ধরতে পুলিশ ১২ হাজার ডিভাইস ব্যবহার করে একশটির বেশি দেশে।

Full Video


ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এটা দেখেছেন কি? দেখে নিন