সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ হলো এক ধরনের জলযান বা ওয়াটার ক্রাফট। এটি পানির উপরে ও নিচে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে। এটি খুব সহজে সমুদ্রের গভীরে চলে যেতে পারে আবার সমুদ্রের গভীরতা মাপতে পারে। এটি লুকিয়ে থেকে খুব সহজেই শত্রুর উপর আক্রমণও করতে পারে।
সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার সাবমেরিন নিখোঁজের ঘটনা বিশ্বজুড়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তবে এই সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজের ইতিহাস কিন্তু দীর্ঘদিনের। ৪০০ বছর আগে ১৬২০ সালে প্রথম সাবমেরিন আবিষ্কৃত হয়। এরপর ঊনবিংশ শতকে এসে সামরিক কাজে ব্যবহৃত হতে শুরু করে সাবমেরিন।ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমসের অধীনে রাজকীয় নৌবাহিনীতে কর্মরত কর্নেলিয়াস জ্যাকবসজুন ড্রেবেল নামের এক ডাচ নাগরিক ১৬২০ সালে সাবমেরিন আবিষ্কার করেন বলে জানা যায়। তার আবিস্কৃত সাবমেরিনটি ড্রেবেলীয় সাবমেরিন নামে পরিচিত হয়ে আছে।
এরপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সাবমেরিনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। শত্রুবাহিনীর জাহাজ কিংবা ডুবোজাহাজ আক্রমণ মোকাবেলায় এর ভূমিকা ব্যাপক। গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের ২০২০ সালের হিসেব অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের ৪০টি দেশে মোট ৫১৪টি সাবমেরিন আছে। সবচেয়ে বেশি সাবমেরিন রয়েছে চীনের, ৭৯টি। আমেরিকার ৬৮টি এবং রাশিয়ার রয়েছে ৬৪টি। বাংলাদেশেরও রয়েছে দুটি সাবমেরিন।
যেভাবে কাজ করে সাবমেরিন
সাবমেরিন মূলত কাজ করে প্রাচীন গ্রিক বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের প্লবতার সূত্র অনুযায়ী ‘ব্যালাস্ট ট্যাঙ্ক’ থিওরির উপর ভিত্তি করে। উদাহরণস্বরূপ, একটা বোতলের ভেতর যখন বাতাস থাকে, তা কিন্তু পানিতে ভাসে। আবার বোতলের ভেতর পানি ভরা হলে তা ডুবে যাবে। অতএব, বোতলের ভেতর যদি কোন সিস্টেমে পানি অপসারিত করে বাতাস ঢোকানো যায়, তাহলে বোতলটা আবার পানিতে ভেসে উঠবে।
ঠিক একইভাবে পানির নিচে ডুব দেওয়ার জন্য সাবমেরিনে কতগুলো ব্লাস্ট ট্যাংক থাকে। ট্যাংকের বাল্ব খুলে সমুদ্রের পানিকে প্রবেশ করানো হয় যাতে সাবমেরিনটির ভেতরে পানি ঢুকে সাবমেরিনটি ক্রমশ ভারী হয়ে পানিতে নিমজ্জিত হতে থাকে। আবার উপরে ওঠার দরকার হলে সাবমেরিনটির ভেতরে থাকা কম্প্রেসড এয়ার এর মাধ্যমে পানিকে বের করে দেয়া হয়। ফলে সাবমেরিনটি হালকা হয়ে পানির সারফেসে চলে আসে।
তবে এক্ষেত্রে সাবমেরিনের ভেতরে কোন প্রকার চাপের পরিবর্তন হয় না। কারণ এতে উন্নত মানের স্টিল বা টাইটেনিয়াম এর মতো ধাতু ব্যবহার করা হয়। আর সাবমেরিনের পেছনে প্রপেলার থাকার কারণে এটি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।সাবমেরিনের ভেতরে অক্সিজেনের যোগান দেয় অক্সিজেন জেনারেটর, যা ইলেকট্রোলাইসিস প্রক্রিয়ায় কাজ করে। আর কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে সোডা লাইম হিসেবে কেমিক্যাল প্রশমিত করে বের করে দেওয়া হয়। আর বিশুদ্ধ পানি সরবারহ করা হয় বাষ্পীভবনের মাধ্যমে।