বিশ্ববাজারে দাম কমায় দেশে ভোক্তাপর্যায়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলপিজি) মূল্য দ্বিতীয়বারের মতো সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বেসরকারি খাতে ১২ কেজি সিলিন্ডারের এলপিজি মূসকসহ ৯০৬ টাকা থেকে কমিয়ে ৮৪২ টাকা করা হয়েছে। এটি সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য, যা ১ জুন থেকে কার্যকর হবে।
আর উৎপাদন পর্যায়ে ব্যয় পরিবর্তন না হওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির এলপিজির দাম পরিবর্তন করা হয়নি। সরকারি সাড়ে ১২ কেজি এলপিজির দাম আগের ৫৯১ টাকাই থাকছে। গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির নতুন দাম প্রতি লিটার ৪১ টাকা ৭৪ পয়সা। আগে এটি ছিল ৪৪ টাকা ৭০ পয়সা।
বিজ্ঞাপন
আজ সোমবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন দাম ঘোষণা করে জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি। গত ১২ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করেছিলে এই সংস্থা। সে সময় বলা হয়েছিল, বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে প্রতি মাসে দাম সমন্বয় করা হবে। এর আগে গত ২৯ এপ্রিল একদফা দাম সমন্বয় করা হয়।
জানা গেছে, এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এই দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরামকো। এটি কার্গো মূল্য (সিপি) বা সৌদি সিপি নামে পরিচিত। এই সৌদি সিপিকে ভিত্তি মূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করেছে বিইআরসি। চার মাস ধরে বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম কমছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল বলেন, সৌদি সিপি, ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার ও ব্যাংকিং হারে পরিবর্তন বিবেচনা করে দাম সমন্বয় করা হয়েছে।
দাম কার্যকর করা নিয়ে বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেন, কেউ নির্ধারিত দামের কমে বিক্রি করতে পারে। কিন্তু বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না। কমিশনঘোষিত মূল্যহার বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসন যাতে ভূমিকা রাখতে, সে জন্য বাণিজ্যসচিব ও জ্বালানিসচিবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির সদস্য মোহম্মদ আবু ফারুক, মকবুল ই ইলাহি চৌধুরী, মোহাম্মদ বজলুর রহমান ও মো. কামরুজ্জামান। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন কমিশনের সচিব রুবিনা ফেরদৌসী।
গত ডিসেম্বরে বিইআরসিতে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করে এলপিজি সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো। তাদের প্রস্তাব মূল্যায়ন করে বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। এরপর গত ১৪ জানুয়ারি এলপিজির দাম নির্ধারণ নিয়ে গণশুনানি করে বিইআরসি।
জানা গেছে, দেশে বেসরকারি খাতে এলপিজির ব্যবসা শুরু হয় ২০ বছর আগে। কয়েক বছর ধরে বাজারে এর চাহিদা ও ব্যবসার বিস্তৃতি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। কিন্তু দীর্ঘ সময় গ্রাহকের জন্য এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করতে পারেনি বিইআরসি।পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থের খুচরা মূল্য নির্ধারণে একটি প্রবিধানমালার খসড়া তৈরি হয় ২০১২ সালে, যা আজ পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। প্রবিধানমালা ছাড়াই উচ্চ আদালতের আদেশে বাধ্য হয়ে দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু করে বিইআরসি।
ক্যাবের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এক মাসের মধ্যে গণশুনানির মাধ্যমে দাম পুনর্নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দাখিল করতে গত বছরের ২৫ আগস্ট নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। নির্ধারিত ওই সময়ের মধ্যে দাম নির্ধারণ করতে না পারায় আদালতের কাছে ক্ষমা চেয়ে সময় বাড়িয়ে নেয় বিইআরসি। জনস্বার্থে ২০১৬ সালে রিট আবেদনটি করেছিল ক্যাব।